দাবি তুহিনের বন্ধু অলঙ্কারের

ওভারটেক করার আক্রোশেই খুন

অলঙ্কার জানান, এই এলাকায় খুব বেশি দিন না আসায় সব রাস্তাঘাট চেনা ছিল না তাঁদের। রাস্তায় বেরিয়ে চিরঞ্জিত-মনোজদের মোটরবাইকটি এগিয়ে যায়

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৫
Share:

অলঙ্কার পাল

মোটরবাইক কেন গাড়িকে টপকে চলে যাবে, শুধু এই আক্রোশেই খুন করা হয়েছে কালনার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তুহিন মল্লিককে— অভিযোগ তাঁর বন্ধু তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অলঙ্কার পালের।

Advertisement

ছত্তীসগঢ়ের নয়া রায়পুরে শনিবার রাতে খুন হন কালনার ভাদুড়িপাড়ার বছর চব্বিশের তুহিন। ওই ঘটনায় জখম হন কালনার নিচুজাপটের বাসিন্দা অলঙ্কার। তিনি এখনও সেখানেই রয়েছেন। কী ঘটেছিল সেই রাতে, ফোনেই জানালেন তিনি।

নয়া রায়পুরের পলৌদ এলাকায় কালনার মহিষমর্দিনীতলার যুবক চিরঞ্জিত সেনের সঙ্গে থাকতেন তুহিন। দু’জনে একই নির্মাণ সংস্থার কর্মী। অলঙ্কার অন্য এক যুবকের সঙ্গে থাকেন সেক্টর ২৭ এলাকায়, যা তুহিনদের বাসস্থান থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে। অলঙ্কার জানান, শনিবার কাজ শেষে দেখা করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। তুহিন ও চিরঞ্জিতকে মোটরবাইকে নিয়ে তিনি তাঁর বাসস্থানে পৌঁছন। সেখানেই রাতে থাকার পরিকল্পনা হয়। সন্ধের পরে তাঁরা খাবারের জন্য দু’টি মোটরবাইক নিয়ে বেরোন। একটিতে ছিলেন তিনি ও তুহিন। অন্যটিতে তাঁর রুমমেট মনোজ ও চিরঞ্জিত।

Advertisement

অলঙ্কার জানান, এই এলাকায় খুব বেশি দিন না আসায় সব রাস্তাঘাট চেনা ছিল না তাঁদের। রাস্তায় বেরিয়ে চিরঞ্জিত-মনোজদের মোটরবাইকটি এগিয়ে যায়। তাঁরা পিছিয়ে পড়েন। তুহিন তাঁর কর্মস্থল দেখতে চাইলে তাঁরা দু’জনে সেখানে যান। খানিকক্ষণ সেখানে কাটানোর পরে রওনা দেন। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরে অন্ধকারে রাস্তা বুঝতে পারছিলেন না। ইতিমধ্যে চিরঞ্জিত ফোন করে জানান, তাঁরা বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন। খাবারও তৈরি। তাড়াতাড়ি তাঁদের ফিরতে বলেন।

অলঙ্কার বলেন, ‘‘এর পরেই রাস্তায় আমরা একটি সাদা গাড়ি দেখতে পাই। সেটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা সেটির পাশ দিয়ে চলে আসি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই গাড়িটি পিছন থেকে এসে আমাদের মোটরবাইকে ধাক্কা দেয়। বিবাদে না জড়িয়ে আমরা বাঁ দিকের একটি রাস্তা ধরে এগোতে থাকি।’’ তিনি জানান, খানিক পরে বাড়ি ফেরার রাস্তাও বুঝতে পারেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেই সেই গাড়িটি দ্রুত গতিতে পিছন থেকে এসে সামনের রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে ব্রেক কষে দাঁড়াতে হয় তাঁদেরও।

অলঙ্কার অভিযোগ করেন, গাড়িটি থেকে প্রথমে এক যুবক বেরিয়ে এসে তাঁর মুখে ঘুষে মেরে হিন্দিতে জানতে চায়, মোটরবাইক নিয়ে কেন তাঁরা গাড়িকে ওভারটেক করল। ঝামেলা এড়াতে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করলেও সে কোনও কথা শুনতে চায়নি। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে আসে আরও দুই যুবক। তিন জনে মিলে বেধড়ক মারধর শুরু করে তাঁকে। গাড়ি থেকে নেমে আসে চালকও। অলঙ্কারের কথায়, ‘‘আমাকে বাঁচাতে আসে তুহিন। ওকে এক যুবক আর চালক মিলে মারতে শুরু করে। গাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে আসে ওরা। আমার গলায় ছুরি চালানোর চেষ্টা করলে হাত দিয়ে আড়াল করি। হাত জখম হয়। বুকে, পেটে ক্রমাগত লাথি মারায় এক সময়ে জ্ঞান হারাই।’’

তিনি জানান, জ্ঞান ফিরতে দেখেন, চার জন মিলে তুহিনকে মারধর করছে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তার পরে গাড়ি নিয়ে চার জন পালিয়ে যায়। অলঙ্কার বলেন, ‘‘খোঁজাখুঁজি করে রাস্তার পাশে তুহিনের ফোনটা পাই। চিরঞ্জিতকে ফোন করে আসতে বলি। খানিক পরে একটি স্কুটিতে ওরা এসে পৌঁছয়। তুহিনের শরীরে রক্ত ঝরছিল। স্কুটিতে করেই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় চিরঞ্জিতেরা। তখনও ওর মুখ থেকে গোঙানির শব্দ বেরোচ্ছিল।’’ তিনি জানান, পরে পুলিশ ও চিরঞ্জিত এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখনই জানতে পারেন, তুহিনের মৃত্যু হয়েছে।

অলঙ্কার জানান, পুলিশের কাছেও এই ঘটনার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘দোষীদের সাজা চাই। সে জন্য যত দিন প্রয়োজন এখানে থেকে পুলিশকে সাহায্য করে তার পরে কালনায় ফিরতে চাই।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, রায়পুরের পুলিশ সুপার অমরেশ মিশ্রের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা। তবে দ্রুত ঘটনার কিনারার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘তুহিনের মা অসুস্থ, পরিবারের সদস্যেরা শোকস্তব্ধ। তাঁদের পক্ষে এখনই ওখানে যাওয়া সম্ভব নয়। নথিপত্র যা প্রয়োজন তা ডাকযোগে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন