Coronavirus

করোনা ওয়ার্ডের ‘ভরসা’ মুনমুন

বছর তিনেক আগে এই হাসপাতালে কাজ শুরু করেন মুনমুন। ঠিকাদার সংস্থার অধীনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে বছরখানেক আগে অঙ্কোলজি বিভাগে কাজে যোগ দেন তিনি।

Advertisement

সুপ্রকাশ চৌধুরী

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০০:৪৫
Share:

মুনমুন দাস। নিজস্ব চিত্র

করোনা-ওয়ার্ডে একটানা নমুনা সংগ্রহ করা থেকে, পরীক্ষায় সাহায্য করায় সজাগ তিনি। রোগীকে মানসিক শক্তি জোগানোতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। গত চার মাস ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা লড়াইয়ের অন্যতম যোদ্ধা মুনমুন দাস। হাসপাতাল সুপার থেকে পুলিশ ক্যাম্প এমনকী, রোগীর পরিবারেরও ভরসা বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবতী।

Advertisement

বছর তিনেক আগে এই হাসপাতালে কাজ শুরু করেন মুনমুন। ঠিকাদার সংস্থার অধীনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে বছরখানেক আগে অঙ্কোলজি বিভাগে কাজে যোগ দেন তিনি। তবে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো ও ‘সারি’ (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) ওয়ার্ড তৈরির পর থেকে সেখানেই কাজ করছেন। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, গত চার মাসে এক দিনও ছুটি নেননি তিনি। অক্লান্ত ভাবে ‘পিপিই কিট’ পরে ছুটে বেরিয়েছেন ওয়ার্ড জুড়ে। হাসপাতালের এক কর্তা জানান, অনেক রোগীই করোনা-আক্রান্ত হয়ে জেনে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁদের মনের জোর রাখাটাও জরুরি। দিনকয়েক আগে ভর্তির পরে এক মহিলা ভয়ে, আতঙ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছিলেন। তাঁকে সামলানোর পুরো ভার নেন মুনমুন। মহিলা আস্তে আস্তে মনের জোর ফিরে পেয়েছেন। হাসছেন, কথা বলছেন। ওই কর্তার কথায়, ‘‘মুনমুন নিজের কাজের বাইরেও অন্যদের সাহায্য করেন। রাতবিরেতে মর্গে যেতেও পিছ-পা হন না।’’

বর্ধমানের সদরঘাটের বাসিন্দা মুনমুন দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। স্বামী তাঁদের ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বহু দিন আগে। একা হাতে সংসার, ছেলেদের পড়াশোনা সামলান তিনি। করোনা-পরিস্থিতিতে কাজ করতে ভয় লাগে না? মুনমুন বলেন, ‘‘এই রোগে মানুষ কেমন অসহায় হয়ে পড়েন। আমাকে যখন করোনা ওয়ার্ডে কাজ করতে বলা হয়, ভয় একটু পাইনি তা নয়। কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগী ও রোগীর পরিজনদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাধ্যমতো এলাকার গরিব মানুষজনকে খাবারও বিলি করেন তিনি।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি দে বলেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ, টেকনিশিয়ান অনেকেই জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। কিন্তু নিজের কাজ, রোগীদের কাউন্সেলিং করা, টেকনিশিয়ানদের সহযোগিতা করা সব বিষয়ে মুনমুন আমাদের নজর কেড়ে নিয়েছেন। হাসপাতাল মানে সেবাকেন্দ্র। সেখানে মুনমুন দৃষ্টান্তের মতো।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন