‘বিপর্যয়ের’ নাম আসানসোল দক্ষিণ

বিজেপির বিপুল ভোটবৃদ্ধি এবং তৃণমূলের আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ প্রাথমিক ভাবে তিনটি কারণকে সামনে আনছেন।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০২:৪১
Share:

ছবি: পিটিআই।

এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভাতেই বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের সব থেকে শোচনীয় অবস্থা আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায়। এই এলাকায় বিজেপির ‘লিড’ ৫৩,৮২০ ভোটের। লোকসভায় ভরাডুবির কারণ কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে তাই বিশেষ নজর থাকছে এই এলাকার দিকে, খবর তৃণমূল সূত্রে।

Advertisement

এই বিধানসভা এলাকায় ২০১৪-র লোকসভায় তৃণমূল ও বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ৫৫,৩৫৩ ও ৭৬,৪১৫। এ বার তৃণমূলের ভোট খানিকটা বেড়ে হয়েছে, ৫৭,২০১। কিন্তু বিজেপির ভোট বেশ ভাল রকম বেড়ে হয়েছে, ১,১১,০২১টি।

বিজেপির বিপুল ভোটবৃদ্ধি এবং তৃণমূলের আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ প্রাথমিক ভাবে তিনটি কারণকে সামনে আনছেন। তাঁদের মতে, প্রথমত, গণ সংগঠনগুলির সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দুর্ব্যবহার ও যোগাযোগের অভাব ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তৃণমূল কর্মীদের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প, দলীয় নানা কর্মসূচির কথা পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দিতে ভরসা গণ সংগঠনগুলিই। অথচ, এ বারের ভোটে সে ভাবে সংগঠনগুলিকে কাজে লাগানো হয়নি।’’ ওই তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গণ সংগঠনের সদস্যদের কোথাও যেন বোঝাপড়ার সমস্যা ছিল।

Advertisement

উল্টো দিকে, তরুণ প্রজন্মের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে বৈঠক, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের প্রচার কোন পথে হবে তার রূপরেখা তৈরি করা-সহ নানা প্রক্রিয়ায় দেখা যায় বিজেপি-কে। আসানসোলের একটি ভবনে সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের উপস্থিতিতে ওই কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়।

দ্বিতীয়ত, এই এলাকাটি মূলত শিল্প নির্ভর। কিন্তু এখানে তৃণমূল সমর্থিত কোনও শ্রমিক সংগঠন সে ভাবে দানা বাধেনি বলেই জানান শ্রমিকদের একাংশ। এমনকি, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড যখন বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় দু’-একটি সভা করা ছাড়া আর কোনও কর্মসূচি নেয়নি তৃণমূল। অভিযোগ, শ্রমিকদের পাশে দেখা যায়নি এলাকায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদেরও। তবে, প্রচারে নেমে তৃণমূল-সহ অন্যদের বলতে শোনা গিয়েছে, কারখানা বন্ধের জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রচারের পাল্টা ‘যুক্তি’ হিসেবে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেন, অলাভজনক সংস্থা চালু রেখে লাভ নেই। বরং জোর দিতে হবে নতুন শিল্পে। দলের এই ‘প্রচার’-ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে দাবি বিজেপির স্থানীয় নেতা, কর্মীদের।

তৃতীয়ত, বার্নপুরের দামোদর লাগোয়া কালাঝরিয়া-সহ নানা এলাকায় অবৈধ বালির কারবারে জড়িত তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব, এই অভিযোগকে সামনে রেখে প্রচারে নামে বিজেপি। এমনকি, গত বিধানসভায় এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা এই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর ‘এজেন্ট’ কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীও বিজেপি-তে থাকাকালীন এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রচারে সে ভাবে নিজেদের বক্তব্য তৃণমূল গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেনি বলেই দাবি এলাকাবাসীর একাংশ। দীপ্তাংশুবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর নেতৃত্বে দলের একাংশ কাজও করেননি বলে দাবি তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।

তৃণমূলের হারের নিরিখে আসানসোল দক্ষিণের পরেই রয়েছে কুলটির নাম। নির্বাচনী সভায় এলাকার কাউন্সিলরদের বড় অংশের অনুপস্থিতি-সহ নানা বিষয়ে তৃণমূলের কোন্দল সামনে আসে। তা ভোটেও প্রভাব ফেলেছে বলে অনুমান। এ ছাড়া আসানসোল উত্তরে ‘মেরুকরণের ভোট’, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ায় বামেদের ভোট বিজেপিতে যাওয়ার মতো কারণগুলিকে হারের জন্য দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ। বারাবনিতে প্রচার পর্বেও অবৈধ কয়লার কারবারটি সামনে আসে। তা ছাড়া এই এলাকায় ভোটের দিনে বিজেপি প্রার্থীর বাবুল সুপ্রিয়ের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ভোটারেরা ভাল ভাবে নেননি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

যদিও তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘হারের কারণ বিধানসভা ধরে ধরে এখনই বিস্তারিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। পর্যালোচনা শুরু হয়েছে।’’ তবে বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ঝড়, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সাংসদের কাজ, সর্বোপরি মানুষের আস্থা— এর জোরেই আমাদের এই জয়।’’ আর তৃণমূলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী বলছেন, ‘‘বিপর্যয়ের আরেক নাম, আসানসোল দক্ষিণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন