Geographical Indication

নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের জিআই-এর জন্য তথ্য তলব

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৫
Share:

মেলা-উৎসব শুরু হয়েছে। কাঠের পুতুল তৈরিতে ব্যস্ত পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের শিল্পী। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্বের শিল্প পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের ‘জিআই’ বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ তকমা পাওয়ার কাজ কিছুটা এগোল। ওই তকমার জন্য ইতিপূর্বে আর্জি জানানো হয়েছিল। সে মতো জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কাঠের পুতুল সম্পর্কে আরও কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চেয়েছে ‘জিআই ড্রাইভ মিশন’।

Advertisement

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়ঙ্কা সিংলা বৃহস্পতিবার বলেন, “পূর্বস্থলীর কাঠের পুতুলকে জিআই তকমা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

‘জিআই’ বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ তকমা দেওয়ার অর্থ হল, কোনও একটি অঞ্চলের জনপ্রিয় পণ্যকে ভৌগোলিক ভাবে চিহ্নিত করা। এর আগে এই জেলার সীতাভোগ-মিহিদানা ও জেলার দক্ষিণ দামোদরে উৎপাদিত গোবিন্দ ভোগ চালও ‘জিআই’ তকমা পেয়েছে। কোন পণ্য ‘জিআই’ তকমা পাবে, তা ঠিক করে কেন্দ্রের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অব ইন্ডিয়া’-র অন্তর্গত সংস্থা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, রসগোল্লার ‘জিআই’ তকমা নিয়ে বাংলা আর ওড়িশার মধ্যে টানাটানির পরে এ বঙ্গেও ‘নজরদারি’ করার জন্য একটি বিশেষ ‘সেল’ তৈরি করা হয়। তারাই এক-একটি অঞ্চলের বিশেষত্ব তুলে ধরে ‘জিআই’ তকমা পাওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে। পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের জন্যও আবেদন করা হয়।

জেলা প্রশাসনের দাবি, জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায় দেড়শো বছর ধরে জড়িয়ে রয়েছে নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। শিল্পীদের তৈরি পেঁচা, রাজারানি ও গৌর-নিতাইয়ের বেশ সুনাম রয়েছে। ভোটের সময় জেলা প্রশাসনও ‘ম্যাসকট’ হিসেবে নতুনগ্রামের পেঁচাকেই তুলে ধরে। এখানকার শিল্পী শম্ভুনাথ ভাস্কর ১৯৫৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।

শিল্পীদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘ক্লাস্টার’। ‘ইউনেস্কো’র সঙ্গে তারা যুক্তও হয়েছে। নতুনগ্রামে তৈরি করা হয়েছে ‘হাব’। সেখানে থাকার জায়গা, কাজের জায়গা থেকে মিউজ়িয়াম পর্যন্ত করা হয়েছে।

জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ কর বলেন, “নতুনগ্রামের শিল্পীদের নানা সময় সরকার সাহায্য করে। শিল্পীরা অনলাইনে বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিদেশিদেরও ওই গ্রামে যাতায়াত রয়েছে। ‘জিআই’ তকমা পেলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নতুনগ্রামের পুতুলের স্বীকৃতি মিলবে।’’

সূত্রের খবর, ‘জিআই’ তকমা পাওয়ার পরে যখন ‘লোগো’ তৈরি হয়, তখন সচরাচর ব্যবসায়ীদের জন্য একটা গুণগত মাপকাঠি বেঁধে দেওয়াটাই রেওয়াজ।

অর্থাৎ, ওই মাপকাঠি পূরণ না করলে ‘লোগো’ ব্যবহারের অনুমতি মিলবে না। বিশ্বের দরবারে সার্বিক ভাবে পণ্যের মান ধরে রাখাটাও এক গুরুদায়িত্ব।

ওই ক্লাস্টারের কর্তা বিজয় সূত্রধর জানান, ৮২টি পরিবারের ২৮৯ জন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বছরে কোটি টাকার উপরে বিকিকিনি হয়। তাঁর আশা, “জিআই ছাপ ও লোগো পেলে নতুনগ্রামের পুতুলের কদর আরও বাড়বে।’’

শিল্পী উত্তম ভাস্কর থেকে রাজেশ্বরী সূত্রধরেরাও মনে করেন, “বাজার বড় হলেই শিল্পেরও চাহিদা বাড়বে।’’ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের কর্তারা মনে করেন, ‘জিআই’ তকমা মিললে নতুনগ্রামের সঙ্গে অগ্রদ্বীপ স্টেশন এলাকার শিল্পীরাও লাভবান হবেন।

জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক স্বপন ঠাকুরের দাবি, “দাঁইহাট শহরে প্রস্তর ভাস্করদের বিকাশ হয়েছিল। এই শিল্প লুপ্তপ্রায় হয়ে পড়ে। বর্গি হানা, গঙ্গার সরে যাওয়া ও ‘বর্ধমান জ্বর’ হওয়ার ফলে, দাঁইহাট থেকে অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন। ভাস্করদেরও একটি শাখা নতুনগ্রামে উঠে গিয়ে কাঠের শিল্পের প্রচলন করেন। যার মধ্যে ইতিহাস ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন