প্রতীকী ছবি।
শীত পড়েছে। আর পিকনিক হবে না, তা কখনও হয়! কিন্তু আনন্দ-উৎসবের পরে মাঠে, নদীর পাড়ে বা পার্কে বেশ কিছুদিন পড়ে থাকে থার্মোকল, প্লাস্টিকের থালা-বাটি। তা থেকে আশপাশের এলাকা যেমন দূষিত হয়। তেমনি দূষিত হয় নদীর জলও। এর পাশাপাশি রয়েছে শব্দ দূষণও। চড়া সাউন্ড বক্সের শব্দে বিপাকে পড়ে পশু-পাখিরাও।
পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমাতে এ বার একটি বন্যপ্রাণ বিষয়ক সংগঠন ও দুর্গাপুরের দু’টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘গ্রিন পিকনিক মিশন’। তার সূচনা হয় মঙ্গলবার বড়দিন থেকেই। ইতি মধ্যেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে দুর্গাপুর পুরসভাও। গত বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা-বাটি ও সাউন্ড বক্সের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যেমন— পিকনিক করতে গিয়ে মদ্যপান নিষিদ্ধ, নৌকায় ওঠার সময় লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক ইত্যাদি।
মঙ্গলবার বড়দিন উপলক্ষে দুর্গাপুর ব্যারাজে পিককিন করতে অনেকেই এসেছিলেন। প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা-বাটির ব্যবহার নজরে আসেনি। শোনা যায়নি সাউন্ড বক্সের আওয়াজও। প্রকাশ্যে মদ্যপান নজরে আসেনি। তবে পুলিশ কর্মীদের নজর এড়িয়ে কেউ কেউ গভীর জলে নেমে স্নান করেছেন। পুলিশ কর্মীরা দেখলেই অবশ্য তাঁদের তুলে দিয়েছেন। তা ছাড়া বিপদ এড়াতে প্রস্তুত ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দল। কিন্তু নৌকায় লাইফ জ্যাকেট পরে উঠতে দেখা যায়নি কাউকে। এক নৌকাচালক ঋষি সমাদ্দার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লাইফ জ্যাকেট নেই। যদি পুরসভা বা অন্য কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে সম্ভব হতে পারে।’’ পুরসভার ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসন, বন দফতর, পরিবেশের উপরে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের বায়োলজি বিভাগ ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সচেতনতা প্রচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নানা ভাবে।
এ দিন ব্যারাজে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে পিকনিক করতে আসা মানুষজনের কাছ থেকে প্লাস্টিকের জলের বোতল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হয়। প্লাস্টিক ও থার্মোকলের থালা-বাটির পরিবর্তে শালপাতা, কলাপাতা, পদ্মপাতার থালা-বাটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ প্লাস্টিক বা থার্মোকল মাটিতে মেশে না। সেখানে শালপাতা বা কলাপাতা সহজেই মিশে যায়। নোংরা আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে। এলাকা পরিষ্কার রাখতে পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত এলাকা সাফাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্গাপুরের বন দফতরের আধিকারিক মিলনকুমার মণ্ডল এ দিন ব্যারাজে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সকলে মিলে একযোগে প্রচার চালাচ্ছি। দুর্গাপুর ব্যারাজে একটিও সাউন্ড বক্স বাজেনি। মাইথন, গুঞ্জন ইকোপার্ক ও নাচনেও একইভাবে নজরদারি চালানো হয়েছে।’’
সব মিলিয়ে এ বারের পিকনিকের মরসুমে দুর্গাপুর ব্যারাজের পরিবেশ ভাল থাকবে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা।