চলছে রাস্তা সংস্কারের কাজ। পথচারীদের একাংশের দাবি, এই কাজ হওয়াটা জরুরি। কিন্তু তার জেরে ছড়াচ্ছে দূষণও। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে বিসি রায় রোডে গ্যামনব্রিজ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র ।
আসানসোল ও রানিগঞ্জ— এই দুই শিল্প শহরের বাতাসের গুণমান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে নাগরিক ও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে, সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) একটি প্রকল্প তৈরি করে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে আসানসোল পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে সিপিসিবি এবং পুরসভা। আগামী দেড় বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিসিবি-র নোডাল অফিসার দেবব্রত দাস জানান, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল-এর (এনজিটি) নির্দেশ অনুযায়ী, দেশ জুড়ে ‘জাতীয় বায়ু গুণবত্তা’ অভিযান চালাচ্ছে সিপিসিবি। সম্প্রতি ওই বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ারেরা আসানসোল এবং রানিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা বায়ু দূষণের পরিমাণ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্দিষ্ট করে কী পরিমাণ দূষণ, তা জানা না গেলেও প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসানসোল পুরসভার নোডাল অফিসার কাঞ্চনকান্তি সাম বলেন, “বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি রয়েছে। বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণও যথেষ্ট বেশি আছে বলে বোর্ডের দেওয়া প্রকল্প রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।” বিশেষজ্ঞেরা আরও জানিয়েছেন, খোলা জায়গায় খড়কুটো, গাড়ির টায়ার, কয়লার দহন, ডিজেল এবং পেট্রল চালিত গাড়ির ধোঁয়া থেকেই দূষণ হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, অক্টোবরে যে ক’দিনের তথ্য মিলেছে, তার উপর ভিত্তি করে আসানসোল শহরের বাতাসের গুণমান বেশ কয়েক দিন ‘মডারেট’ ছিল বলে সিপিসিবি-র ‘ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’-এ দেখা গিয়েছে। ‘মডারেট’ অর্থাৎ, বাতাসের গুণমান এ ক্ষেত্রে থাকে, ১০১ থেকে ২০০-র মধ্যে। এই ধরনের গুণমানের বাতাসে দীর্ঘদিন থাকলে হাঁপানি, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের রোগে ভোগা লোকজনের শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। ওই ইনডেক্স অনুযায়ী, আসানসোলে গত ৬, ৮ এবং ১০ থেকে ১৩ তারিখ, দুপুর ৪টের সময় বাতাসের গুণমান ঘোরাফেরা করেছে ১০২ থেকে ১৪৯-এর মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতেই দুই শহরের বায়ু দূষণ রোধ করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কী রয়েছে এই প্রকল্পে? দেবব্রত জানান, মূল প্রকল্পের অধীনে একাধিক ছোট প্রকল্প তৈরি করে কাজ শুরু হয়েছে। বাতাসে ধূলিকণা ও রাসায়নিক কণার উপস্থিতি কমাতে খোলা আকাশের তলায় কোনও কিছু পোড়ানো বন্ধ করা, শহরাঞ্চলের সব রাস্তা পাকা করা, নির্মাণ সামগ্রী বা পাকাবাড়ির ভাঙা অংশ খোলা স্থানে মজুত না করা, নিয়মিত নিকাশি ও সাফাইয়ের কাজ করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টে। জোর দেওয়া হয়েছে পুকুর, খালবিল নিয়মিত সংস্কার এবং নিরবিচ্ছিন্ন বনসৃজনেও।
দেবব্রত দাস বলেন, “এই সুপারিশগুলি পালন করার জন্য যানবাহনের উপরেও কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেগুলি: প্রথমত, ১৫ বছরের বেশি পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যতটা সম্ভব ব্যাটারি অথবা সিএনজি চালিত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয়ত, যে সব এলাকায় ধূলিকণার জেরে দূষণ বেশি, সেখানে প্রচুর পরিমাণে জল ছেটাতে হবে। কাঞ্চনকান্তি জানান, দূষণপ্রবণ এলাকায় নিয়মিত জল ছেটাতে ২৫টি বিশেষ ধরনের গাড়ি কেনার তোড়জোড় চলছে। পাশাপাশি, শহরে ব্যাটারিচালিত গাড়ির ব্যবহার শুরু করার জন্য প্রাথমিক ভাবে ১০টি চার্জিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আসানসোলের পুর-কমিশনার নীতীন সিঙ্ঘানিয়া জানান, পরিকল্পনা রূপায়ণের লক্ষ্যে বন দফতর, ট্র্যাফিক পুলিশ, পরিবহণ দফতর এবং সেচ দফতরের সাহায্য চাওয়া হবে। পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “৩৪ কোটি টাকা যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়ে শহরবাসীকে শুদ্ধ বায়ু উপহার দেওয়া হবে।”