‘একা থাকার সুযোগ নিল ওরা’

শুক্রবার রাতে পরিজনদের তরফে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে ঘিরে বিক্ষোভ হয় বর্ধমান মেডিক্যালে। দলের জেলা সভাপতিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ থামানো হয়। শনিবার সকালেও কালনা-বর্ধমান রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share:

নিহত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা, বেগপুরে। নিজস্ব চিত্র

গুলি লাগার খবর ছড়াতেই জড়ো হচ্ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রাতে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিকের মৃত্যুর খবর আসতেই তেতে ওঠে গ্রাম।

Advertisement

শুক্রবার রাতে পরিজনদের তরফে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে ঘিরে বিক্ষোভ হয় বর্ধমান মেডিক্যালে। দলের জেলা সভাপতিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ থামানো হয়। শনিবার সকালেও কালনা-বর্ধমান রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

নিহত নেতার স্ত্রী, বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শিউলি মল্লিক ঘটনার পর থেকে বিছানা নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভাল সংগঠন করছিল বলে নাদনঘাটের এক নেতার পরিকল্পনাতেই খুন হতে হল স্বামীকে।’’ সিআইডি তদন্তের দাবি করেছেন তাঁরা।

Advertisement

বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদারও বলেন, ‘‘খুনের পিছনে রয়েছে শাসকদলের অন্তর্কলহ। ঠিকঠাক তদন্ত হলেই তা প্রকাশ্যে আসবে।’’

ইনসান কে

• ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলে। দলের সর্বক্ষণের কর্মী।
• ২০০৮ সাল থেকে প্রভাব বাড়ে কালনার বেগপুর পঞ্চায়েত এলাকায়।
• ২০১৩ সালে বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হন ইনসান মল্লিকের স্ত্রী শিউলি মল্লিক। ইনসান স্বপন দেবনাথের ঘনিষ্ঠ হন তখন থেকেই।
• ২০১৮ সালেও বেগপুর পঞ্চায়েত গঠনে একাধিপত্য।
• ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পরে, কাঁকুড়িয়া ও বেগপুর পঞ্চায়েতের দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পান। সুলতানপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও প্রভাব বাড়ে।
• দক্ষ সংগঠক ও ‘ভোট নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে দলে জনপ্রিয়।
• কালনা পুরভোটে ‘ইনসান-বাহিনী’ সক্রিয়।
• ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে জয়ী হয়ে কৃষি কর্মাধ্যক্ষ হন।
• ২০১৯-র লোকসভা ভোটে কালনা, কাটোয়া মহকুমায় যে পঞ্চায়েতে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি ভোটে এগিয়েছিল তা হল বেগপুর।

এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাসে জমাট বাঁধা রক্ত। এলাকার ঘিরে রেখেছে পুলিশ। থমথমে চারপাশ। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, দিনভর মাঠে আলু বসানোর কাজ করে সন্ধ্যায় বিশেষ বাইরে থাকেন না কেউ। এক বাসিন্দা মহিবুল শেখ বলেন, ‘‘আগেও দু’বার হামলা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই হামলার পর থেকে আমরা কেউ না কেউ দাদার সঙ্গে থাকতাম। বিশেষত রাতে পার্টি অফিস থেকে ফেরার সময়। আলু চাষের মরসুম চলায় সারা দিন খেটে ওই রাতেই কেউ তাঁর সঙ্গে ছিল না। তার সুযোগ নিল ওরা।’’শুক্রবার রাতে গদারপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে ফেরার পথে একটি কাঠের দোকানের সামনে ডান উরুতে দু’টি গুলি লাগে ওই নেতার। কিছুটা গিয়ে একটি খুঁটিতে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে মোটরবাইকটি। সেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রোজই ওই কার্যালয় থেকে মোরাম রাস্তা ধরে ফিরতেন তিনি। সঙ্গে কেউ না কেউ থাকত। তবে ওই দিন একাই ছিলেন। নিহত নেতার অনুগামীদের দাবি, একা থাকারই সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

বাবাকে হারিয়ে কেঁদেই চলেছে দুই মেয়ে, একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিন মল্লিক এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওয়াজ়মিন মল্লিক। নিহত নেতার নেতার দিদি ঝর্ণা মল্লিক দাবি করেন, ‘‘সিআইডি তদন্ত করলেই দোষীরা ধরা পড়বে।’’

বিকেল ৩টের পরে দেহ পৌঁছয় গ্রামে। প্রথমে বেগপুর সমবায় সমিতি, পরে একে একে দলীয় কার্যালয়, পঞ্চায়েত ভবন, নির্মীয়মাণ একটি হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষে মৃতদেহ যায় বাড়িতে। ওই নেতাকে শেষ বারের জন্য দেখতে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ।

নিহতের ছোট ভাই রাজীব মল্লিক বলেন, ‘‘দল নিশ্চয় এর বিচার করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন