মশা রুখতে গবেষণাগার হবে বর্ধমানে

বর্ধমানেই মশার বংশবিস্তার কী ভাবে রোধ করা যায়, তার হদিস পেতে রীতিমতো গবেষণাগার তৈরি হচ্ছে। উদ্যোগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

গত বছরেই স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী এই শহরে ডেঙ্গি বা মশাবাহিত অন্য রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে দেখে প্রমাদ গুণতে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসক ও শহরবাসীর একাংশকে। এ বার সেই শহর, বর্ধমানেই মশার বংশবিস্তার কী ভাবে রোধ করা যায়, তার হদিস পেতে রীতিমতো গবেষণাগার তৈরি হচ্ছে। উদ্যোগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, গবেষণাগারে মশার বংশবিস্তার রোধের পাশাপাশি, মাছের বংশবিস্তার কী ভাবে দ্রুত বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলবে। সব ঠিক থাকলে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা) প্রকল্পে পাওয়া আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকায় গবেষণাগারটি তৈরি হবে। সেখানে মশা বা মাছ বাদে ভাষাতত্ত্বের গবেষণাও করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে স্থানভেদে ভাষার তারতম্য, ভাষা-মিশ্রণ প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা হবে। সুযোগ থাকছে রামায়ণ-মহাভারত, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, বিআর অম্বেডকরের চিন্তা-ভাবনা নিয়েও গবেষণা করারও।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রমেন সর বলেন, “গত শনিবার বেলা ১টার সময়ে রুসার পোর্টালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছি।” জানা গিয়েছে, এ বছর গবেষণা সংক্রান্ত কাজের জন্য রুসা প্রকল্প থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ধমান ছাড়াও যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রুসা প্রকল্প থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আর্জি জানানোর সুযোগ পেয়েছে। গত বছরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা পেয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু কী ভাবে এই প্রকল্পের অধীনে গবেষণা করা হবে মশা বা মাছ নিয়ে? রুসা-প্রকল্পের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসার তথা শিক্ষক অপূর্বরতন ঘোষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স’ গড়তে চাইছি। সেখানে মশার জীবাণু রোধের গবেষণা চলবে, তেমনই মাছের বংশবিস্তার করার জন্যও গবেষণা করা হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণসায়র-সহ ৩৪টি নিজস্ব জলাশয় রয়েছে। ওই সব জলাশয়েই বাস্তবমুখী গবেষণা করা হবে। অপূর্ববাবুর দাবি, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলি থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়, তার চেয়েও বেশি উৎপাদন কী ভাবে করা সম্ভব তা নিয়েও গবেষণা চলবে।’’

এ ছাড়াও জৈব সম্পদ প্রযুক্তির উন্নয়ন, বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহার করে নানা রকম প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরির উপরেও জোর দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জানান, গোটা দেশে কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্প থেকে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুদান দেওয়া হবে। সে কারণে ওই চার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবে।

২০১৭-য় স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বছর অগস্টে ১৩ জনের, সেপ্টেম্বরে ৮০ জনের অ্যালাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ‘পজিটিভ’ মেলে। সেপ্টেম্বরে ওই ৮০ জনের মধ্যে ৩০ জনই বর্ধমান শহরের বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা প্রায়ই মশার মারা স্প্রে বা ধোঁয়া দিয়ে অভিযানে নামে। তাতে কাজ কত দূর হয়, তা নিয়ে সন্দিহান শহরবাসীর একাংশ। নতুন গবেষণা হলে সীতাভোগ-মিহিদানার শহর মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে পারে বলেই আশা তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন