‘চার দিকে শুধুই কান্নার শব্দ’

পুলিশ জানায়, সকালে গুসকরা থেকে একটি বেসরকারি বাস প্রায় ৫৫ জন যাত্রীকে নিয়ে কালনা বাসস্ট্যান্ডে আসছিল। বেলা ১১টা নাগাদ একটি কারখানার সামনে  মোটরবাইকটির সঙ্গে রাস্তার বাঁকে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে বাসটির। বাসটি উল্টে যায়। পিষ্ট হন ওই দুই যুবক। পুলিশ জানায়, জখম হন ৪৬ জন বাসযাত্রীও।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৪
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস ঘিরে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

দুপুর ১২টা। কালনা ১ ব্লকের কেষ্টপুরে ততক্ষণে খবর ছড়িয়েছে, বাস উল্টেছে। রটেছে মৃত ‘বেশ কয়েকজন’। ক্রমে বাড়তে থাকে ভিড়। পুলিশ এলে জনতার প্রথম প্রশ্ন, ‘কত জন মারা গিয়েছেন বলুন?’ পুলিশ অবশ্য জানায়, নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা শাজাহান কারিগর (২৯) ও ফিরোজ মল্লিক (২৬) নামে দুই মোটরবাইক আরোহী যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আর এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই দফায় দফায় অশান্তি বাধল কেষ্টপুর ও কালনা মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া রাস্তায়। এর জেরে ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরাও।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সকালে গুসকরা থেকে একটি বেসরকারি বাস প্রায় ৫৫ জন যাত্রীকে নিয়ে কালনা বাসস্ট্যান্ডে আসছিল। বেলা ১১টা নাগাদ একটি কারখানার সামনে মোটরবাইকটির সঙ্গে রাস্তার বাঁকে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে বাসটির। বাসটি উল্টে যায়। পিষ্ট হন ওই দুই যুবক। পুলিশ জানায়, জখম হন ৪৬ জন বাসযাত্রীও। তাঁদের বাসের জানলা, দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন স্থানীয়েরাই। জখম দশ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিরা কালনা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আটঘোরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল দাস, নজু শেখ, দিবাকর মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘মাঠে কাজ করছিলাম। আচমকা বিকট শব্দ। কারখানাটির সামনে আসতেই উল্টে যাওয়া বাসটি দেখি। চতুর্দিকে রক্ত পড়েছিল। চার দিকে শুধুই কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।’’ ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ পৌঁছলে জনতার একাংশ ক্ষোভপ্রকাশ করেন। অভিযোগ, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা খোকন ঘোষ, রাম সর্দারদের দাবি, ‘‘এর মধ্যেই মৃতের সংখ্যা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ায়। এর পরেই দেখি, কেউ কেউ ইট-পাটকেল ছুড়ছে।’’ সিভিক ভলান্টিরদের ‘নথি পরীক্ষা’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জনতার একাংশ। সেই সঙ্গে লাগাতার পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো, গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। উত্তেজনার পারদ চড়ছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস, এসডিপিও (কালনা) শান্তনু মজুমদার, কালনা, নাদনঘাট, মন্তেশ্বর, মেমারি থানার অফিসার ইনচার্জেরা। পুলিশ-কর্তাদের বারবার বলতে শোনা যায়, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হবে। কিন্তু জনতার বিক্ষোভ থামেনি।’’

Advertisement

রাস্তায় আগুন জ্বেলে প্রতিবাদ। কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

ইতিমধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের রেশ পৌঁছয় কালনা মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া এসটিকেকে রোড এলাকাতেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি করে ও নদী-পথে নৌকায় চড়ে শান্তিপুরের প্রায় একশো জন বাসিন্দা এবং তাঁদের স্থানীয় আত্মীয়েরা পৌঁছে যান। শুরু হয় রাস্তা অবরোধ।
অবরোধের জেরে ব্যস্ত রাস্তায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। সমস্যায় পড়েন হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও।

গোটা বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসের সঙ্গে ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন