Robots in Medical Field

কোষের চেয়েও ছোট, খুদে রোবট সাঁতার কেটে ঘুরবে শরীরে, ধ্বংস করবে ক্যানসার কোষ, কঠিন ব্যামোও সারাবে

শরীরের ভিতরে ঢুকে রোগ সারাবে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও করবে। ওষুধ বা জটিল থেরাপির বদলে খুদে রোবট দিয়ে অসুখবিসুখ সারানোর চেষ্টায় গবেষকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৪৯
Share:

খুদে রোবট শরীরে ঢুকে অসুখ সারাবে, আর কী কী কাজ করবে? ফাইল চিত্র।

ওষুধ খাওয়ার আর দরকার পড়বে না। কাটাছেঁড়া করে জটিল অস্ত্রোপচার করার দিনও শেষ হয়ে আসছে। শরীরে ঢুকে ভিতর থেকে রোগ সারাতে পারবে এমন রোবট তৈরি করে ফেলেছেন গবেষকেরা। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এমন রোবট তৈরি করেছেন, যা আকারে-আয়তনে দেহকোষের চেয়েও ছোট। এমন রোবট শরীরে ঢুকে রক্ত বা লসিকায় দিব্যি সাঁতরে বেড়াবে। ক্ষতিগ্রস্ত কোষ দেখলেই ছুটে গিয়ে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করবে। ক্যানসার থেকে জটিল স্নায়ুর রোগ— ওষুধ বা চিকিৎসাপদ্ধতি যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে খুদে রোবট অসাধ্যসাধন করবে বলেই আশা রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

খুদে ‘মাইক্রো-সুইমার’ কী ভাবে রোগ সারাবে?

এই রোবটেরা তুখোড় সাঁতারু। তাদের আবার ছোটখাটো মগজও বানিয়ে দিয়েছেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। আকারে ০. ২X০.৩X০.০৫ মিলিমিটার। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রোবটটিকে চালনা করা হবে লেজ়ার রশ্মি বা চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে। রোবটের গায়ে প্ল্যাটিনাম ও টাইটেনিয়ামের সেন্সর আছে। সেগুলিকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। লেজ়ার আলো ফেললে রোবটগুলির সেন্সর সক্রিয় হবে। রোবটগুলির চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হবে, যার সাহায্যে তারা সাঁতার কাটতে পারবে। দিক পরিবর্তন করতেও পারবে। গবেষকেরা ঠিক যে দিকে চাইবেন, সে দিকেই ঘোরানো যাবে তার মুখ, নিয়ন্ত্রণ করা যাবে গতিও।

Advertisement

‘সায়েন্স রোবটিক্স’ এবং ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে মাইক্রো-রোবট নিয়ে গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। মিশিগান ইউনিভার্সিটির দুই গবেষক ডেভিড ব্ল্যাইউ ও ডেনিস সিলভেস্টার রোবটটির সেন্সর তৈরি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, শব্দতরঙ্গ দিয়েও রোবটটিকে চালনা করা যাবে। তার কাজ হবে শরীরের ভিতরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলির মেরামত করা।

কী ভাবে?

ওষুধ খেলে যেমন তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তেমনই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে একাধিক খুদে রোবট শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হয়, এ ক্ষেত্রে তা হবে না। বিশেষ করে কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপির সময়ে ক্যানসার কোষ যেমন নষ্ট হয়, তার আশপাশে থাকা সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হয়। রোবট সেখানে সমস্যার সমাধান করবে। কেবলমাত্র খুঁজে খুঁজে টিউমার কোষগুলিকেই নিশানা বানাবে ও ধ্বংস করবে। ক্যানসার নিরাময়ে শুধু নয়,হার্টের ধমনীর ব্লকেজ খুলতে, রক্তনালির ভিতরে ‘প্লাক’ পরিষ্কার করতেও কাজে লাগানো হবে খুদে রোবটদের। শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ, যেমন চোখ বা মস্তিষ্কের গভীরে অস্ত্রোপচার করতেও সাহায্য নেওয়া হবে মাইক্রো-রোবটদের।

শরীরের ভিতরে কোথাও হাড়ে চিড় ধরেছে কি না বা কোনও অঙ্গে প্রদাহ হচ্ছে কি না, তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। খুদে রোবটের সেন্সর শরীরের ভিতরে ঘুরে ঘুরে পিএইচের মাত্রা মাপবে। কোন অংশে প্রদাহ হচ্ছে, কোথায় টক্সিন জমা হচ্ছে, তার খবরও দেবে। এমনকি কোনও অঙ্গের কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন হচ্ছে কি না, সে বার্তাও পৌঁছে দেবে। ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’-এর কারণে অনেক ওষুধই এখন ঠিকমতো কাজ করছে না। খুদে রোবট দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে দাবি গবেষকদের। ব্যাক্টেরিয়ার প্রাচীর ভেঙে সেগুলিকে অকেজো করে দেওয়ার কাজও করবে রোবট। ফলে কড়া ওষুধ খাওয়ার দরকারও পড়বে না। এই রোবট নিয়ে গবেষণা চলছে। মাইক্রো-রোবট আর কী কী কাজ করতে পারবে, তা আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement