পুর প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুজোর আগেই মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছিলেন গুসকরার উপপুরপ্রধান-সহ তিন সদস্য। মহকুমাশাসকের নির্দেশে তদন্তেও যান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বুদ্ধদেব দাস। সূত্রের খবর, রিপোর্টে পুরসভা পরিচালনায় গলদ এবং আর্থিক দুর্নীতির কথা জানান তিনি। এ বার সেই তদন্ত রিপোর্ট জেলাশাসকের দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন মহকুমাশাসক মুফতি শামিম সওকত।
১৬ সদস্যের গুসকরা পুরসভায় ১১ জন তৃণমূল। কিন্তু পুরবোর্ড গড়ার সময় থেকেই বারবার সামনে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পুরভবনে কাউন্সিলরদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এক প্রবীণ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, জায়গা দখল করতে গিয়ে বোমাবাজির অভিযোগও উঠেছে। শেষমেশ দলের নীতি নির্ধারণ বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুসকরা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে বোর্ড ভাঙার কথাও বলেন। এরপরে অনুব্রতবাবু দলের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার-সহ ১১ জনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে গুসকরার প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই, প্রাক্তন উপপুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদার ও বর্তমান বোর্ডের উপপুরপ্রধান চাঁদনিহারা মুন্সিরা বোর্ড ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের পরে বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার, স্থানীয় ব্লক নেতা সালেক রহমান-সহ বীরভূমের একাধিক নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে জানান গুসকরা পুরসভার গোলমাল থামাতে গেলে পুরবোর্ড ভেঙে প্রশাসক বসাতে হবে। প্রশাসনের কর্তারাও তৃণমূল নেতৃত্বকে একই কথা জানিয়েছেন। দলের একাংশের দাবি, এরপরেই বোলপুরের বাসিন্দা তৃণমূলের এক নেতার নির্দেশে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পুরসভার ওই তিন সদস্য মহকুমাশাসকের কাছে পুর প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে ১৭ দফা অভিযোগ করেন। যার বেশিরভাগটাই পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
কী রয়েছে ওই অভিযোগে?
ওই তিন কাউন্সিলরের অভিযোগ, পুরপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় পুরসভায় ‘একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরচারী শাসন’ চালাচ্ছেন। পুরসভার বেশির ভাগ এলাকায় জলসঙ্কট চললেও তিন নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ম না মেনে একাধিক পানীয় জলের কল বসানো হয়েছে। আবার পুরসভার কর্মচারীদের হাজিরা খাতা নিত্যানন্দবাবু নিজের কাছে রাখেন এবং টেন্ডার বাক্স বাড়িতে নিয়ে চলে যান বলেও তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের আরও দাবি, নিত্যানন্দবাবু ও পুরপ্রধানের ইচ্ছেতেই ঠিকাদাররা কাজ পান। কোনও রকম দরপত্র ছাড়াই কাজ দেওয়া হয়। এমনকী, কমিশন মিললে তবেই ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়া হয়। পুর এলাকায় কোনও রকমের দরপত্র ছাড়াই ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। লিখিত অভিযোগে ওই তিন সদস্য দাবি করেন, ‘‘পুরপ্রধানের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনও আলোচনা করতে পারেন না নাগরিকেরা। সবসময় পাশে থাকেন নিত্যানন্দবাবু। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়।’’ এ ছাড়া পুরসভার দরপত্র ও অন্য তহবিলে কত টাকা গচ্ছিত রয়েছে তা জানানো হয় না বলেও তাঁদের দাবি।
তদন্ত শুরুর আগে নিত্যানন্দবাবু বলেছিলেন, ‘‘দলের নির্দেশ যাঁরা মানে না, তাঁদের দলে থাকার কোনও অধিকার থাকে কি না বুঝতে পারছি না।’’ তবে এ দিন বারবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি তিনি। পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, ‘‘ওই সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পুরআইন মেনেই পুরসভা পরিচালনা করি।’’