নিউকেন্দা প্যাচে চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় বারবার ব্যাহত হচ্ছে ইসিএলের খনি সম্প্রসারণের কাজ। সাতগ্রাম এরিয়ার কেন্দা খোলামুখ খনি সম্প্রসারণে হাত পড়তেই ফের সেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, খনি সম্প্রসারণ না হলে এক দিকে যেমন সংস্থা ফের ক্ষতির মুখে পড়বে, তেমনই পড়ে-পড়ে নষ্ট হবে ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দার যে অঞ্চলে খোলামুখ খনি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেখানে প্রায় ১৩ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত রয়েছে। এই কয়লা বেশ উন্নত মানের। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য সর্বোত্তম। ভূগর্ভস্থ এই কয়লা তুলতে সময় লাগবে ১২ বছর। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, খনি সম্প্রসারণে ওই অঞ্চলে প্রায় তিনশো একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮৭ একর অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলতে চলতেই বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
খনি সম্প্রসারণে স্থানীয় কিছু লোকজন বাধা দিচ্ছেন কেন? ইসিএলের এক কর্তা দাবি করেন, এলাকায় বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা চলছে। সেগুলি খনি সম্প্রসারণ প্রকল্প এলাকায় পড়ে গিয়েছে। প্রকল্পের কাজ এগোলে ওই সব ইটভাটার কারবার বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় এক দল বাসিন্দা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই প্রকল্পে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওই কর্তার। সাতগ্রাম এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার নারায়ণ দাসও দাবি করেন, সম্প্রসারণ প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জমি দিতে চাইলেও গ্রামবাসীদের একাংশ প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুনর্বাসনের দাবি তুলে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারে ঠিক নয়। এখনই পুনর্বাসন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’
ইসিএল কর্তৃপক্ষের এই অভিযোগ যদিও উড়িয়ে দিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। স্থানীয় গ্রামবাসীরা ‘গ্রাম রক্ষা কমিটি’ গড়ে প্রকল্প এলাকায় প্রতিবাদ শুরু করেছেন। ওই সংগঠনের নেতা সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ইটভাটার অজুহাত তুলে ইসিএল কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমাদের দাবি নিয়ে ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছি। ওঁরাই বসতে চাইছেন না।’’ তাঁদের আশঙ্কা, প্রকল্পের কাজ যত গ্রামের দিকে এগিয়ে আসবে ততই এলাকায় দূষণ ছড়াবে। ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা তোলা হলে ঘর-বাড়িতে ফাটল ধরবে। এলাকায় বাস করা মুশকিল হবে। তাঁদের দাবি, পুনর্বাসনের দাবি মানা না হলে তাঁরা কিছুতেই প্রকল্প চালিয়ে যেতে দেবেন না।
মাস দেড়েক আগে আসানসোলের ভানোড়ায় খনি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই এলাকার লোকজনের বাধায় মুখে পড়েন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সে বারও দূষণ সমস্যার কথা তুলে পুনর্বাসন ও এলাকার বেকারদের চাকরির দাবিতে বিরোধ শুরু করেন বাসিন্দারা। প্রায় মাসখানেক প্রকল্পের কাজ থমকে থাকার পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। এ বার অবশ্য এখনও ইসিএলর তরফে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় অবশ্য বলেন, ‘‘ইসিএলের আর্থিক স্থিতি ধরে রাখতে বাধা উপেক্ষা করেই আমরা কাজ করব। প্রয়োজনীয় বাকি জমিও অধিগ্রহণ করা হবে।’’