এক সময় বামপন্থীরা ঠাট্টা করে বলতেন, কালনায় দলীয় প্রতীকে ‘পাথর’ দাঁড়ালেও জিতে যাবে। সে ‘বিশ্বাস’ বদলেছে ২০১১-য়। পরবর্তীতে একের পর এক ভোটে জয়ের মার্জিন বাড়তে থাকে তৃণমূলের। তবে এ বার ঋণগ্রস্ত চাষিদের মৃত্যু, আলু-পেঁয়াজে দাম না পাওয়ার ক্ষোভ পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে, বলছেন বিজেপি নেতারা। তৃণমূলের সেই অস্ত্রকেই পাল্টা ব্যবহার করছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে কালনার ভোটচর্চায় এ বার ‘মাটি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন সব নেতারাই।
কালনা বিধানসভার মধ্যে রয়েছে দুটি ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা। কালনা ১ ব্লকে রয়েছে কৃষ্ণদেবপুর, বাঘনাপাড়া এবং হাটকালনা। কালনা ২ বিধানসভায় রয়েছে আনুখাল, অকালপৌষ, বৈদ্যপুর, বড়ধামাস, বাদলা, পিণ্ডিরা, কল্যাণপুর, সাতগাছিয়া। বরাবরই এই বিধানসভার ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ করে কালনা ২ ব্লকের ভোট ব্যাঙ্ক। ২০০৬ সালে এই বিধানসভায় সিপিএম প্রার্থী অঞ্জলি মণ্ডল জিতেছিলেন ৪৮ হাজার ভোটে। এই ব্লক থেকেই লিড পেয়েছিলেন ৩৯ হাজার। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে এই ব্লকে বামেদের ভোট কমে যায়। ২০১১ সালে হাতছাড়া হয় বিধানসভা।
গত পঞ্চায়েতে আবার দেখা গিয়েছে বিজেপির শক্তি বেড়েছে। কালনা ২ ব্লকের দুটি জেলা পরিষদের আসনের একটিতে দ্বিতীয় ছিল বিজেপি। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে কালনা ১ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপির বাড়ি বাড়ি প্রচার, র্যালি, দেওয়াল লিখনে যতটা ঝাঁজ রয়েছে ততটা অবশ্য নেই কালনা ২ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিতে। বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদারের যদিও দাবি, ‘‘পথেঘাটে কান পাতুন। দেখবেন সকলের মুখে আমাদের কথা। শাসক দলের সন্ত্রাস আর নেতাদের আঙুল ফুলে কলা গাছের দৃশ্য দেখে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। প্রচারে দল যেখানে যাচ্ছে সেখানেই সাধারণ মানুষ আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন।’’
কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোনে দলীয় কার্যালয়ে হাফ হাতা জামা এবং লুঙি পড়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রণব রায়ে পরপর টেলিফোনে নির্দেশ অবশ্য অন্য কথা বলছে। দিনের বেশির ভাগ সময় কার্যালয়েই কাটে অকৃতদার প্রণববাবুর। তিনি বলেন, ‘‘মিলিয়ে নেবেন, এই বিধানসভা কেন্দ্রে ভাল লিড পাবে দল। আমার ব্লকে ১৫৫টি বুথ রয়েছে। বুথ স্তরে কর্মীদের প্রতিটি জায়গা থেকে ২০০ ভোটের লিড চাওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপির কতটা শক্তি আমার ব্লকে দেওয়াল লিখন গুণে দেখলেই বোঝা যাবে।’’ তৃণমূলের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে কালনা ২ ব্লকে সিপিএম ভোটের একাংশ গিয়েছিল বিজেপির বাক্সে। এ বার তা ফিরে পাওয়ার লড়াই করছে বামেরা।
এই বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রাম, শহরে বড় প্রচারে তেমন না ঝুঁকে বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিয়েছে সিপিএম। ব্লকের সিপিএম নেতা শেখ মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘এই বিধানসভা এলাকার বেশির ভাগ মানুষ চাষের উপর নির্ভরশীল। অথচ আলু, পেঁয়াজ, ধান, পাটে দেনায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। মানুষ এই সরকারে বীতশ্রদ্ধ।’’ সাম্প্রতিক কালে একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো সরকারি প্রকল্পে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফসলের দাম না পাওয়া বা সহায়ক মূল্যে ধান, আলু কেনায় গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ভাগীরথীর উপর সেতু তৈরির পরিকল্পনা, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, কিসান মান্ডি, কর্মতীর্থের মতো বহু উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। বাকি অভিযোগও ঠিক নয়।
এখন কোন ‘পাথরে’র জোর বেশি, বলবে ভোটবাক্স।