বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রচার, জনসভা আয়োজনের অনুমতি নেওয়ার জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সেই ‘সুবিধা’ অ্যাপেই বিস্তর অসুবিধা, অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।
নির্বাচন কমিশন ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘সুবিধা’ অ্যাপ চালু করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলি জানায়, অনুমতি নেওয়ার জন্য এই অ্যাপ আসলে ‘এক জানলা পদ্ধতি’। এর ফলে আবেদনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয় না। বাড়িতে বা অফিসে বসে স্মার্টফোন থেকেই অনুমতির জন্য আর্জি জানানো যায়। আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেলে প্রয়োজনীয় ‘নির্দেশ’। ফলে সভা বা প্রচারের জন্য স্থানীয় থানায় আলাদা করে অনুমতি নেওয়ার দরকার পড়ত না।
বিরোধীদের অভিযোগ, থানা অনেক সময় শাসক দলের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করে। ফলে বঞ্চিত হতে হয় তাঁদের। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। কিন্তু ‘সুবিধা’ অ্যাপে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই বলেই দাবি বিরোধী দলগুলির। কারণ, ওই অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের সময়ে জমির মালিক ও অন্য অনুমতিপত্রের ‘স্ক্যান’ করা কপি জমা দিতে হয়। আবেদন খতিয়ে দেখে অনুমতি দেয় প্রশাসন। যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তা হলে প্রশাসনকে কারণও জানিয়ে দিতে হয় ওই অ্যাপের মাধ্যমেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সম্প্রতি মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) ডাকা লোকসভা ভোট সংক্রান্ত সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে, আসন্ন ভোটের আগে সুবিধা অ্যাপ সে ভাবে কাজ করছে না। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সুবিধা অ্যাপ এখন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে খুলছে। সেখানে মোবাইল নম্বর দিতে হচ্ছে। মোবাইলে ওটিপি আসছে। কিন্তু মোবাইলে অ্যাপটি খুলছে না। এ ছাড়া আগের বারের মতো ‘এক জানলা’ পদ্ধতিতে কাজ করছে না অ্যাপটি। গতবার শুধু যে জায়গায় সভা হবে সেই জায়গার মালিকের অনুমতিপত্র থাকলেই আবেদন করা যেত। লাউডস্পিকার, আইন-শৃঙ্খলার মতো বিষয়গুলি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অনুমতি দিত প্রশাসন। এ বার জমির অনুমতি নিতে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলার অনুমতির জন্য থানায় আবেদন করতে হচ্ছে। লাউড স্পিকার ব্যবহারের জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হচ্ছে। সব অনুমতি মেলার পরে তা সুবিধা অ্যাপে জমা করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পদ্ধতি অনেক জটিল হয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য ‘ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন’ করা সমস্যা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে যে কোনও কর্মসূচির জন্য থানার অনুমতি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পুলিশের উপরে ভরসা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। বিরোধীদের আশঙ্কা, শাসক দল পুলিশের উপরে প্রভাব খাটিয়ে আগাম অনুমোদন আদায় করে নিতে পারে। বিরোধী নেতৃত্বের আরও আশঙ্কা, আগে বিরোধী দল আবেদন জানালেও পরে একই জায়গায় সভা বা অন্য কর্মসূচির জন্য আবেদন করে তা পেয়ে যেতে পারে শাসক দল। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, সমস্ত নিয়ম মেনেই অনুমতি দেওয়া হয়। পক্ষপাতিত্বের কোনও প্রশ্নই নেই।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘আগের বিধানসভা নির্বাচনে সভা বা প্রচারের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় ছিল সুবিধা অ্যাপের জন্যই। কিন্তু এ বার অ্যাপটি এখনও পর্যন্ত ঠিক ভাবে কাজ করছে না। ফলে কোনও অনুমতির জন্য থানায় আবেদন করতে হচ্ছে। আমরা বৈঠকে সুবিধা অ্যাপ দ্রুত কার্যকরী করার দাবি জানিয়েছি।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তরুণ রায় বলেন, ‘‘বৈঠকে উপস্থিত আমাদের দলের প্রতিনিধিও এ বিষয়ে তাঁর সহমত জানিয়েছেন।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইও রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন।
মহকুমা প্রশাসনের তরফে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা।