বেহাল রাস্তা। —ফাইল চিত্র।
একসময়ে মহকুমা ছিল। ছিল পুরসভাও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জোড়া ‘গৌরব’ হারিয়েও রানিগঞ্জে নাগরিক পরিষেবার উন্নতি ঘটেনি, অভিযোগ নাগরিকদের একাংশের। এই নাগরিক পরিষেবা, উন্নয়নের পরিস্থিতি নিয়েই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রানিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় প্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
১৮৪৭ থেকে ২০০৬, মহকুমা শহর ছিল রানিগঞ্জ। ১৮৭৬-এ তৈরি হয় রানিগঞ্জ পুরসভা। কিন্তু ২০১৬-য় নতুন করে আসানসোল পুরনিগম তৈরির সময়ে রানিগঞ্জের সংযুক্তি ঘটে। কিছু দিন পরে তৈরি হয় নতুন জেলাও। কিন্তু সিটিজেন্স ফোরামের তরফে রামদুলাল বসুর ক্ষোভ, ‘‘প্রশাসনিক নানা পরিবর্তন ঘটেছে। তার পরেও শহরের নাগরিক পরিষেবার উন্নতি হল না। ফের মহকুমা হোক রানিগঞ্জ। তবে যদি কিছু হয়।’’
আসানসোল পুরনিগমের সঙ্গে সংযুক্তির পরে শহরের ‘কিছুই হয়নি’, প্রচারে নেমে অভিযোগ সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীরও। তাঁর কথায়, ‘‘রানিগঞ্জের বাসিন্দাদের যে কোনও কাজের জন্য জেলা সদর আসানসোলে ছুটতে হচ্ছে। দ্রুত পুরনো মর্যদা ফিরিয়ে রানিগঞ্জকে ফের মহকুমা শহর করা হোক।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সেই সঙ্গে প্রচারে নেমে সিপিএমের আরও অভিযোগ শহরের যানজট নিয়ে। হাড়াভাঙা সেতুর সংযোগকারী রাস্তা অতীতে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরেও স্থায়ী সংস্কারের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলপুর মোড় থেকে বল্লভপুর রেল গেট পর্যন্ত বাইপাস তৈরির জন্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে দরবার করেছি। উনি আশ্বাসও দেন। এখনও কাজ শুরু হয়নি।’’
রানিগঞ্জ বিধানসভা
আসানসোল লোকসভা
লোকসভা ২০১৪
• তৃণমূল ৪৮৭৬৬ (২৮.৬%)
• বিজেপি ৬১৭৫৮ (৩৬.২১%)
• কংগ্রেস ৪৯৮৭ (২.৯২%)
• বামফ্রন্ট ৪৫৩৬১ (২৬.৬%)
বিধানসভা ২০১৬
• তৃণমূল ৬২৬১০ (৩৬%)
• বিজেপি ৩২২১৪ (১৮%)
• কংগ্রেস *
• বামফ্রন্ট ৭৪৯৯৫ (৪৪%)
*এই ভোটে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা করেছিল
কিন্তু সিপিএমের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এই এলাকায় এক বার ছাড়া চিরকালই ক্ষমতায় থেকেছে সিপিএম। বাম আমলে বা বর্তমান বিধায়কের আমলে কোনও কাজই হয়নি বলে প্রচারে অভিযোগ তৃণমূলের। ১৯৬২ থেকে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে মাত্র একবার ২০১১-য় রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় বামেদের। আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, ‘‘রানিগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে সিপিএমের কথা না বলাই ভাল। কয়েক দশক ক্ষমতায় থেকে ওঁরা শহরটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এ ছাড়া সাফাইকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো, বাইপাস রাস্তা ও হাড়াভাঙা সেতু নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন জিতেন্দ্রবাবু। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন: ‘‘মহকুমার দাবি তো আমাদের। প্রচারে সেটা বলছিও।’’
যদিও প্রচারে নেমে বিজেপির রানিগঞ্জ মণ্ডল সভাপতি সামসের সিংহের দাবি, সিপিএম, তৃণমূল নয় রানিগঞ্জের উন্নতির জন্য তাঁরাই ‘যোগ্য’। তাঁর দাবি, এই বিধানসভা এলাকায় অন্তত ৩০ হাজার পরিবারের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে। প্রচারে বেরিয়ে সেটাই তাঁদের হাতিয়ার। সামসেরবাবুর দাবি, ‘‘গত লোকসভায় আমরা এই এলাকা থেকে প্রায় তেরো হাজার লিড পেয়েছিলাম। এ বার সেটা বাড়বে।’’
এ সব দাবি, পাল্টা দাবির মাঝে রানিগঞ্জে সাংগঠনিক পরিস্থিতির অঙ্কও মাথায় রাখছেন সব পক্ষই। গত পুরসভা ভোটে এই এলাকার ১১টি ওয়ার্ডের ছ’টিতে তৃণমূল, পাঁচটিতে সিপিএম জিতেছিল। পঞ্চায়েত ভোটেও এই এলাকার বেশির ভাগ জায়গা ছিল তৃণমূলময়। সে সব দিকে তাকিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত, পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজের জোরেই এই এলাকায় আমরা নিশ্চিত জিতছি।’’ সিপিএম নেতা রুনুবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতে সন্ত্রাস করেছিল তৃণমূল। ঠিক মতো ভোট হলে এগিয়ে আমরাই।’’ সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে বিজেপির দাবি, দলীয় কার্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি-সহ নানা ভাবে এই এলাকায় তাঁদের সংগঠন আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
কিন্তু এ সবের মাঝে, রানিগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের তরফে রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানের মতো আরও অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘ভোট মিটলে রানিগঞ্জকে মহকুমা করার দাবিটা আবার থিতিয়ে যাবে না তো?’’