ব্যাগে লাল, সবুজ, গেরুয়া নিয়ে ছুটছেন উদয়-আবিরেরা

আগে ‘কাঁচা হাতেই’ দেওয়ালে ফুটে উঠত দলীয় প্রার্থীর নাম। দু’একটা দেওয়ালে ছবিও আঁকা হত। কিন্তু এখন লেখা খোলতাই না হলে মনে ধরে না ভোটারদের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৯
Share:

দেওয়াল লেখায় ব্যস্ত শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।

সবে দেওয়ালে সবুজ ঘাস ফুল ফুটে উঠেছে। এমন সময় পরপর দুটি ফোন। একটির আর্জি, ‘পদ্মটা বড় করে আঁকতে হবে’। পরের ফোন, ‘কাস্তে-হাতুড়ির লাল রংটা একটু বেশি করে দেবেন।’ শিল্পী বলে উঠলেন, ‘‘কাজে অসুবিধে হচ্ছে, কিন্তু এত ডাক পাচ্ছি কাকে কী কথা দিচ্ছি ভুলে যাচ্ছি।’’ ভোটের মরসুমে নেতাদের ফোনই আর্শীবাদ দেওয়াল লিখনের পেশাদার শিল্পীদের কাছে।

Advertisement

আগে ‘কাঁচা হাতেই’ দেওয়ালে ফুটে উঠত দলীয় প্রার্থীর নাম। দু’একটা দেওয়ালে ছবিও আঁকা হত। কিন্তু এখন লেখা খোলতাই না হলে মনে ধরে না ভোটারদের। সে জন্যই তাঁদের কদর বাড়ছে, বলছেন শিল্পারাই। রং-তুলির টানে নানা রকম হরফে, ছড়ায়-কার্টুনে ভরে উঠছে দেওয়াল।

শিল্পীরা জানান, বছরের অন্য দিন দু’তিনশো টাকা রোজগার করতে গিয়ে জুতোর শুকতলা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তাঁদের। সেখানে ভোটের সময় ঘনঘন ডাক আসে। কদর বাড়ে। বরাতও বাড়তে থাকে। নগদও হাতে আসে দিনের দিন। সারা দিন দেওয়াল রাঙিয়ে সন্ধ্যা আটশো, হাজার, কখনও তারও বেশি টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন তাঁরা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এমনই এক শিল্পী ভাতারের উদয় পাইন। বছর চুয়াল্লিশের মানুষটির এখন দু’দণ্ড বসার সময় নেই। তিনি জানান, স্কুলজীবন থেকে ভোটের দেওয়াল লেখার কাজ করছেন। অন্য সময় হোর্ডিং-বোর্ড লিখে থাকেন। সপ্তাহান্তে আঁকাও শেখান। বাড়িতে স্ত্রী,দুই মেয়ে রয়েছে তাঁর। বড় মেয়ে কাটোয়ার জাজিগ্রামে পলিটেকনিক পড়ছেন, ছোট মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। উদয়বাবু বলেন, “একাই লিখছিলাম। কিন্তু এত ডাক পাচ্ছি, যে সময়ের সঙ্গে পেরে উঠছি না। আবার কাউকে ফেরাতেও পারছি না। সে জন্যে ছোট মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি। তাতে আমার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।’’ গত এক মাসে শ’খানেক দেওয়াল লিখে ফেলেছেন তিনি। এখনও অনেক দেওয়াল ‘সাদা’। এ সপ্তাহের মধ্যে কী ভাবে ওই সব দেওয়ালে তুলির টান দেবেন, তাতেই মাথা খারাপের জোগাড় তাঁর।

উদয়বাবুর বাড়ি থেকে মেমারির সুলতানপুরের আবির বিশ্বাসের বাড়ির দূরত্ব অন্তত ৭০ কিলোমিটার। বছর চব্বিশের আবিরের সঙ্গে উদয়বাবুর যোগাযোগও নেই। কিন্তু মিল এক জায়গায়। আবিরও এখন ছুটছেন দেওয়াল রাঙাতে। তিনি বলেন, ‘‘সারা বছর ধরে রংয়ের কাজ করি। যে ডাকে তাঁর কাছেই যাই। আমাদের গায়ে কোনও রাজনৈতিক ছাপ নেই।’’ বছর সাতেক ধরে পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মেমারি, হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে দেওয়াল লিখেছেন। গত একমাসে প্রায় ৪০০টি দেওয়াল লিখে ফেলেছেন বলে তাঁর দাবি। সঙ্গে কার্টুন আঁকছেন ,ছড়া লিখছেন।

পেশাদার শিল্পীর এত চাহিদা কেন? সিপিএমের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “আগে পার্টি ক্লাসে দেওয়াল লেখা শেখানো হত। এখন সেই দিন নেই। নতুনরা তো আসছেই না। পুরনোরাও লিখতে চাইছে না। সে জন্যেই পেশাদার শিল্পীকে ভাড়া করতে হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারন সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় কর্মীরা লেখেন। কিন্তু কাঁচা হাতের লেখায় কি মন ভরে? সে জন্যে পেশাদারদের ডাক পড়ে।’’

লাল-সবুজ-গেরুয়ার কৌটৌ এক সঙ্গে নিয়ে উদয়বাবু বলেন, ‘‘শিল্পের কোনও রং হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন