গত আট বছরে সব ভোটেই আধিপত্য শাসকদলের। গত বছর জেলা পরিষদের তিনটি আসনের একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। বাকি দু’টি আসন মিলিয়ে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ৯৫ হাজার। কিন্তু তার পরেও ভাতার বিধানসভা এলাকায় এ বার মসৃণ ভাবে বড় ‘লিড’ মিলবে, জোর দিয়ে বলছেন না তৃণমূলের নেতারা। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘সবাই তো ভোটের কাজে এখনও নামেনি। ফলে, ভোটের অঙ্ক জটিল হচ্ছে।’’
গত বিধানসভা ভোটেও গেরুয়া পতাকার বিশেষ দেখা মিলত না এই এলাকায়। কিন্তু এ বার সেখান থেকেই বাসে করে ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর সভায় যোগ দিতে গিয়েছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। দলের নেতাদের দাবি, সে দিন ভাতার থেকে ১২টি বাস গিয়েছিল ব্রিগেডে। দিন কয়েক আগে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের দলের প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সমর্থনে মিছিলে যোগ দিতে বিজেপি কর্মীরা বর্ধমান গিয়েছিলেন চারটি বাসে করে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাতারে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট পেলেও দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে তা নেমে আসে ৭ শতাংশে। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে ভাতার সদর এলাকায় তিনটি আসনে জিতেছে বিজেপি। দলের নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে সিপিএমের একটি বড় অংশ ও তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধে’রা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এমনকি, সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের অনেকেও তাঁদের দিকে ঝুঁকেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিপিএমের স্থানীয় কিছু কর্মী মানছেন, ভাতারের বিভিন্ন এলাকার দলের অনেক সমর্থক এ বার বিজেপির দিকে যাচ্ছেন। দলের নেতারা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত লোকসভা ভোটে ভাতারে তৃণমূল এগিয়েছিল ১৪,২১৭ ভোটে। বিধানসভায় দলের এই কেন্দ্রের প্রার্থী জিতলেও ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৬২৮০। দলের একটি সূত্রের দাবি, ২০১৪ সালে এলাকার প্রবীণ দুই নেতা ‘এক সঙ্গে’ মাঠে নেমেছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটে ওই দুই নেতার দ্বন্দ্বের জেরে দল প্রার্থী করে আউশগ্রামের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডলকে। তার প্রভাব পড়েছিল ভোটে। এ বার দুই নেতা প্রকাশ্যে প্রার্থীর দু’দিকে থাকলেও তাঁদের অনুগামীদের অনেকে ভোট নিয়ে নিরুত্তাপ বলে তৃণমূল কর্মীদের অনেকের দাবি।
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ভাতার সদর মফঃস্বল এলাকায় পরিণত হলেও পরিকাঠামো তৈরিতে তেমন নজর দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামে রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশির সমস্যা রয়েছে। কলকাতার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক-পরিমণ্ডল তৈরি, কলেজের পরিকাঠামোর উন্নতির মতো বিষয় নিয়েও দাবিদাওয়া রয়েছে এলাকার মানুষের। ক্ষোভ রয়েছে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি নিয়ে। তৃণমূল বিধায়ক সুভাষবাবু অবশ্য বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে সামনে রেখেই আমরা ভোট চাইছি। স্থানীয় মানুষের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়েও আলোচনা করছি।’’ বিজেপির এই লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি সন্দীপ নন্দীর বক্তব্য, “স্থানীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের আন্দোলন চলছেই। কিন্তু লোকসভা ভোট দেশকে সমৃদ্ধ করার ভোট। ভাতারের মানুষ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকবেন।’’