দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতার সমর্থনে পোস্টার সাঁটছিলেন এক তৃণমূলকর্মী। প্রচার কেমন চলছে, জিজ্ঞাসা করতেই আঙুল দিয়ে দেখালেন কাছের রাস্তা। ঝাঁ চকচকে। বললেন, ‘‘দেখুন রাস্তায় নেমে উন্নয়নের কথা বলেই বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব দিচ্ছি!’’
গত পুরসভা ভোটে দুর্গাপুরে শাসক দল সন্ত্রাস করে জিতেছে, লোকসভা ভোটের আগে দুর্গাপুরে ফের এমনই অভিযোগ করে প্রচার চালাচ্ছেন সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূল ওই পুরসভা ভোটে জিতেছিল ৪৩টি ওয়ার্ডেই। লোকসভা ভোটে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে সিপিএম। সেখানেও উল্লেখ করেছে পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ। কিন্তু তৃণমূলের নেতা, কর্মীরা ভোটের মাঠে নেমে বিরোধীদের এই সব অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি, পাল্টা প্রচারে শহরের উন্নয়নের ছবিটাই হাজির করছেন ভোটারদের সামনে।
কিন্তু কেমন ‘উন্নয়ন’? তৃণমূল নেতৃত্ব পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে প্রচার করছেন, ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে ঢেলে সাজানো হবে দুর্গাপুর শহরকে। শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার আমূল সংস্কার করে ম্যাস্টিক সড়ক গড়া হয়েছে। যেমন, ভগৎ সিংহ মোড় থেকে পুরসভা এলাকা ছাড়িয়ে আড়রা মোড় পর্যন্ত চলে গিয়েছে জওহরলাল নেহরু রোড। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তা একেবারেই বেহাল ছিল। প্রায় আট কোটি টাকা খরচে সড়কের সংস্কার, সম্প্রসারণ ও এলইডি আলো বসানোর কথা জানিয়েছে তৃণমূল। এখন ‘ডিভাইডার’ দেওয়া ঝকঝকে ম্যাস্টিক সড়কে দ্রুতগতিতে ছুটছে যানবাহন। ডিএসপি টাউনশিপের ট্রাঙ্ক রোড ও লাগোয়া আর্টারিয়াল রোড সংস্কারের কথা ছিল ডিএসপি-র। কিন্তু শহরবাসীর অসুবিধার কথা ভেবে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা দু’টি সংস্কার করে ম্যাস্টিক সড়ক তৈরি করেছে পুরসভা, এ-ও ওই এলাকায় গিয়ে প্রচার করছে তৃণমূল। শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া ৯ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ দিকে। প্রায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গাঁধী মোড় থেকে এসবিএসটিসি মোড় ভায়া ৫৪ ফুট সড়কে ডিভাইডার বসিয়ে ম্যাস্টিক সড়ক তৈরির কাজও অনেকটাই এগিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ ছাড়া তৃণমূলের প্রচারে উঠে আসছে, গত বছর নভেম্বরে বাঁকুড়া মোড়ে ডিভিসি-র বর্ধমান সেচখালের উপরে নতুন সেতু চালু হওয়ার কথাও। পরিবহণ দফতরে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বিওজিএল লাগোয়া এডিডিএ-র ৪৫ একর জায়গায় অত্যাধুনিক নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির প্রস্তাব জমা দেওয়া, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে হাইমাস্ট আলো বসানো, সবক’টি ওয়ার্ডে সমস্ত বিদ্যুতের খুঁটিতে এলইডি আলো বসানোর কাজ শুরু করা, পানীয় জলের বিকল্প উৎস হিসেবে ৩৬টি গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা-সহ নানা ‘উন্নয়ন’-ই শহরের ভোট-প্রচারে ভরসা তৃণমূলের। এ ছাড়া তিনটি পরিশোধন কেন্দ্র, বর্ষায় যাতে জল না জমে তার জন্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচে কেএমডিএ-র সহযোগিতায় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরসভা। পাড়ায় পাড়ায় তাঁদের উন্নয়নের এ সব তথ্যই মানুষের কাছে তুলে ধরছেন তাঁরা, জানান শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা।
যদিও এই উন্নয়ন-প্রচারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী, বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পুরভোটের সন্ত্রাসের ক্ষত এ সব বলে শুকোবে না।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ উন্নয়ন চান। রাজ্য সরকার, পুরসভা দুর্গাপুরের উন্নয়নে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে চলেছে। প্রচারে সেই তথ্যই জানাচ্ছেন আমাদের নেতা, কর্মীরা। ভোটে সেই উন্নয়নের সুফল মিলবেই।’’