ভোটের দেওয়াল লিখতে সব দলের ভরসা ভূতনাথ

সম্প্রতি কাঁকসার এক গ্রামে দেখা বছর ৪৫-এর ভূতনাথবাবুর সঙ্গে। আলাপ জুড়তেই তিনি জানান, এই শিল্পে তাঁর আসার কথা।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

কাঁকসা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

ভোটের আগে নাওয়াখাওয়া ভুলে চলছে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।

ছড়ায়, রঙে দেদার লড়াই দেওয়ালে দেওয়ালে। কিন্তু এ সব লড়াইয়ের মূল কারিগর কিন্তু ওঁদের মতো কেউ কেউ। ওঁরা দেওয়াল-শিল্পী। ভোট মরসুমে সব দল থেকেই ডাক আসে ওঁদের। তেমনই এক জন বুদবুদের দেবশালা গ্রামের ভূতনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই দশক ধরে কাঁকসা, বুদবুদের নানা প্রান্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য দেওয়াল লিখন করছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি কাঁকসার এক গ্রামে দেখা বছর ৪৫-এর ভূতনাথবাবুর সঙ্গে। আলাপ জুড়তেই তিনি জানান, এই শিল্পে তাঁর আসার কথা। জানান, ছেলেবেলা থেকেই রং-তুলির সঙ্গে ঘরবসত তাঁর। শুরু হয় ছবি আঁকা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেওয়াল লিখনের ঝোঁক বাড়ে। সেটাকেই পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরেন। তবে এই পেশা ভোট মরসুমে হওয়ায় বাসের পরিবহণ কর্মী ছিলেন তিনি। কিন্তু তা করতে গিয়েই বুঝতে পারেন, তাঁর আগ্রহ যে দিকে, সেই শিল্পকর্মই অবহেলিত হচ্ছে। শেষমেশ বাসের কাজ ছেড়ে পুরোপুরি শিল্প-কর্মকেই বেছে নেওয়া পেশা হিসেবে। আর অন্য সময়ে সুযোগ পেলে বাড়ি বাড়ি পুজো করেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে মণ্ডপসজ্জা, আলপনা দেওয়াও করেন তিনি। তাতেই মোটামুটি দিন গুজরান হয়ে যায় স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে তিন জনের সংসারের, জানান ভূতনাথবাবু।

তবে ভোটের এই ক’মাস নাওয়াখাওয়া ভুলে শুধুই দেওয়াল লেখায় মগ্ন থাকেন এই মানুষটি। কেমন মেলে পারিশ্রমিক? ভূতনাথবাবু জানান, রাজনৈতিক দল ভেদে নানা পারিশ্রমিক রয়েছে। যেমন, দু’টি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে একটি ছোট দেওয়ালে দলের প্রতীক আঁকার জন্য মেলে ৫০ টাকা। বড় দেওয়াল হলে মেলে একশো টাকা। আবার কোনও কোনও দল দিনভর কাজ করানোর বরাত দেয়। সে ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক মেলে হাজার টাকা। দেওয়াল লেখার বিষয়, রং, সবই দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ভূতনাথবাবু বলেন, ‘‘অনেক সময় দেওয়াল লিখতে লিখতে মাথায় নতুন কোনও বিষয় এলে সংশ্লিষ্ট দলকে বলি। তা ওই দলের পছন্দ হলে আমার নিজের ভাবনা স্থান পায় দেওয়ালে। এটা খুবই তৃপ্তির।’’ ভূতনাথবাবু জানান, সকালে তৃণমূল, বিকেলে বিজেপি ও সন্ধ্যায় সিপিএমের দেওয়াল লিখন করতে হয়। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের যুগে দেওয়াল লিখনের কদর কেমন? প্রশ্ন করতেই ভূতনাথবাবুর দাবি, ‘‘দেওয়াল লিখনের কদর মোটেও কমেনি। বরং দু’টি মাধ্যমকেই ভোট-প্রচারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।’’ বুদবুদের তৃণমূল নেতা শ্যামল বক্সী, কাঁকসার সিপিএম নেতা বীরেশ্বর মণ্ডল, বিজেপি নেতা রমন শর্মারা সবাই এক বাক্যে জানান, ভোট বা রাজনীতিতে বিভিন্ন দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাটা স্বাভাবিক। সেই লড়াইয়েই অন্য মাত্রা যোগ করেন ভূতনাথের মতো মানুষেরা। তাঁদের দরকার সব পক্ষেরই।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন