জোরকদমে চলছে মহিষমর্দিনী পুজোর প্রস্তুতি।
কয়েক মাস আগেই ভবা পাগলার মেলা থেকে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৯ জন। ভিন জেলা থেকে আসা মানুষজনের নিরাপত্তা, ভিড় সামলানোর পরিকাঠামো, ঘাটের নিরাপত্তা— সব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কালনার আর এক বড় উৎসব, মহিষমদির্নী পুজোর আগে নিরাপত্তা নিয়ে তাই আগাম সতর্ক প্রশাসন।
আজ, মঙ্গলবার থেকে চারদিনের উৎসব শুরু। মেলায় জাঁকজমক আগের মতো হলেও এ বার নাগরদোলা দেখা যাবে না বলে জানান উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির দাবি, যে জমির উপরে বহু বছর ধরে নাগরদোলা বসে তার এক শরিক প্রথমে নিম্ন আদালতে গিয়ে জমি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা চান। আদালত অবশ্য ২০১৩ সালের ১৪মে তা খারিজ করে দেয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান তিনি। ৪ অগস্ট উচ্চ আদালত জমিটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ততদিনে বেশ কিছু নাগরদোলা এসে গেলেও আর তা বসার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তবে কচিকাচা থেকে বড়রা অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অখুশি। স্থানীয় বাসিন্দা অমল মজুমদারের কথায়, ‘‘ছোট বেলা থেকে দেখছি পুজোর আগের দিন বিকেল থেকে বনবন করে ঘোরে একাধিক নাগরদোলা। এ বার মেলা ফিকে লাগবে।’’ পুজোর জৌলুস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে পুজো কমিটিও। কমিটির সম্পাদক শঙ্কর পান বলেন, ‘‘ওই জমিটির অন্য ১৮ জন শরিক চেয়েছিলেন যাতে পুজোর ঐতিহ্য বজায় থাকে। নাগরদোলা নিয়ে সাধারণ আবগের কথা আমরাও জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু করা যায় নি।’’ শঙ্করবাবুর দাবি, পুজো মণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় আর কোনও বিকল্প জমি না থাকায় নাগরদোলা ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে এ বার। যদিও যাত্রা, পুতুলনাচ, ভোগ বিতরণ, দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যের মতো অন্য অনুষ্ঠান এ বারেও হবে বলে তাঁদের দাবি।
নাগরদোলা এসে গিয়েছে আগেই। কিন্তু আদালতের নির্দেশে মেলায় বসবে না নাগরদোলা।
সোমবার বিকেল থেকেই পুজো মণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেখা গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ কর্মী। খেয়াঘাটেও রয়েছে কড়া নজরদারি। দুর্ঘটনা এড়াতে জেটির ধারে রেলিং, নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণে নজর থাকবে বলেও জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বার একাধিক ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার হলেও এ বার দুটি ঘাট দিয়েই পারাপার করা হবে। যাতে কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। দুর্ঘটনা ঘটলে তা সামাল দিতে স্পিড বোট, ডুবুরি-সহ নানা সরঞ্জামও রয়েছে। পুজো কমিটির তরফে মন্দির লাগোয়া এলাকায় লাগানো হয়েছে ১০টি সিসিটিভি। কালনা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ব্লিচিং, আলো, মশা মারা কামানের ব্যবস্থ্যা করা হয়েছে। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগেরও দাবি, ‘‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এ বার কোনও ফাঁক রাখা হয়নি। আশা করা যায় পুজো নির্বিঘ্নে কাটবে।’’
কালনায় নিজস্ব চিত্র।