বর্ধমানের সাধনপুরে মাটি উৎসবের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। রবিবার। ছবি: উদিত সিংহ।
দু’বছর পরে ফের বর্ধমানের সাধনপুরে কৃষি খামারে আয়োজিত হতে চলেছে মাটি উৎসব। উদ্বোধনে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মাটি তীর্থ, কৃষি কথা’ মেলার মাঠে মঙ্গলবার থেকে সাত দিন ধরে মেলা চলবে। সে দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে তিনি কালনায় একটি জনসভা করবেন। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) মহম্মদ এনাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ রবিবার সকালে কালনার সভাস্থল পরিদর্শন করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, দলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু প্রমুখ। বিকেলে বর্ধমানে মেলা চত্বর ঘুরে দেখেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী স্বপনবাবু-সহ প্রশাসনের কর্তারা।
২০১৩ সাল থেকে কৃষি দফতর মাটি উৎসব করছে। প্রথম দু’বছর হয়েছিল পানাগড়ে। ২০১৫ সালে বর্ধমানের ঝিঙ্গুটির কাছে সাইয়ের মাঠে উৎসব হয়। বর্ধমানের সাধনপুর কৃষি খামারে প্রায় ২৫ একর জায়গায় ‘মাটি তীর্থ, কৃষি কথা’ নামে মেলার মাঠ তৈরি করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে সেখানেই মেলা হচ্ছে। তবে শেষ দু’বছর ওই মাঠে মেলা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘অন্য বারের মতোই মেলার মাঠ ঢেলে সাজা হচ্ছে। করোনা-বিধি মেনে মেলা করার নির্দেশ রয়েছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি আসতে পারেন, এমন ৪৫০ জনের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কালনার সভাতেও যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি যাবেন, তাঁদের আজ, সোমবার বৈদ্যপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ হয়েছে।
কালনায় সভাস্থল পরিদর্শনে নেতারা। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট তিনটি মঞ্চ থাকছে। মূল মঞ্চের নাম ‘মাটি মঞ্চ’। মুখ্যমন্ত্রী সেটিতেই উঠবেন। সেখানে আমলা, বিধায়ক-সহ প্রায় ৪০ জন থাকবেন। তার ডান দিকের মঞ্চে বিভিন্ন জেলায় গত বছর ‘কৃষিরত্ন’ পাওয়া ৩৫০ জন কৃষক ও বাঁ দিকের মঞ্চে লোকসংস্কৃতি শিল্পীরা থাকবেন। তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী সম্মান জানাবেন। মঞ্চের কাছেই হেলিপ্যাড করা হয়েছে। সেখান থেকে মঞ্চ পর্যন্ত আদিবাসী নৃত্য ও ঢাকের বোলে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হবে। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘১০৬টি স্টলে সরকারের বিভিন্ন দফতর সামগ্রী নিয়ে বসবে।’’
মঙ্গলবার কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের মাঠে সভা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ দিন সকালে প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন স্বপনবাবু, দেবুবাবু, তৃণমূলের কালনা শহর সভাপতি দেবপ্রসাদ বাগেরা। কাজের দেখভাল করছেন। এ দিন জেলা পুলিশের কর্তারাও মাঠ পরিদর্শন করেন। সভাস্থলে তৈরি হচ্ছে দু’টি মঞ্চ। একটি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। সেখানে জনা দশেকের বসার জায়গা থাকছে। পাশে একটি মঞ্চে ৩০ জন নেতানেত্রীর বসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। মাঠের পাশে জমিতে তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাড।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, দুপুর ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা। সভাস্থলে বেশি লোক আসবে কালনা ২ ব্লক থেকেই। এ ছাড়া পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ, কাটোয়া, মন্তেশ্বর, দেবীপুর ও লাগোয়া হুগলি জেলার একাংশের কর্মী-সমর্থকেরাও আসতে পারেন বলে তৃণমূল নেতৃত্ব জানান। স্বপনবাবুর দাবি, কাছাকাছি দু’টি মাঠে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে। কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের দাবি, ‘‘সভাস্থলে সব মানুষকে জায়গা দেওয়া যাবে না ধরে নিয়েই রথতলা ময়দান-সহ দু’টি এলাকায় জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এলাকার নারকেলডাঙা, গোপালদাসপুরের প্রাচীন মন্দির, বৈদ্যপুরের দেউল, বিবেকানন্দের পৈতৃক বাসভূমি-সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের ছবি-সমগ্র মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।