গ্রামেও ঝাঁপ পড়ার হাল অনেক স্কুলে

শহরাঞ্চলে এই ছবি আগেই দেখা গিয়েছে। এ বার তার ছোঁয়া গ্রামীণ এলাকাতেও। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্ধের মুখে বেশ কিছু সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুল। পূর্ব বর্ধমানের গ্রামীণ নানা এলাকায় পঞ্চাশটিরও বেশি স্কুলে এখন এমন পরিস্থিতি বলে স্কুল শিক্ষা দফতর (প্রাথমিক) সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

শহরাঞ্চলে এই ছবি আগেই দেখা গিয়েছে। এ বার তার ছোঁয়া গ্রামীণ এলাকাতেও। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্ধের মুখে বেশ কিছু সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুল। পূর্ব বর্ধমানের গ্রামীণ নানা এলাকায় পঞ্চাশটিরও বেশি স্কুলে এখন এমন পরিস্থিতি বলে স্কুল শিক্ষা দফতর (প্রাথমিক) সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ২০ জনের কম পড়ুয়া থাকলে পাশের স্কুলের সঙ্গে তা যুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের ব্যাখা কর্তাদের অনেকের মতে, গ্রামীণ এলাকাতেও এখন ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি স্কুল গজিয়ে উঠেছে। সেখানে মাতৃভাষার সঙ্গে ইংরেজিও পড়ানো হচ্ছে। সেই টানে অভিভাবকদের অনেকে বেসরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন ছেলেমেয়েদের। সর্বশিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টও তাই বলছে।

সর্বশিক্ষা মিশনের পূর্ব বর্ধমান জেলার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে ওই সব বেসরকারি স্কুলগুলি কোনও বোর্ডের নির্দেশে পাঠ্যক্রম তৈরি করে না। নিজেদের খরচে চালানো স্কুলগুলির বেশিরভাগই চলে কার্যত প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পাঠ্যক্রম অনুসারে। দেখা গিয়েছে, গ্রামে সরকার পোষিত স্কুল ও বেসরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রম প্রায় এক। শুধু ইংরেজি পাঠ্যক্রম খানিকটা আলাদা। সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে ইংরেজি চালু হলেও পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অভিভাবকদের।

Advertisement

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী সম্প্রতি জেলার স্কুল পরিদর্শক (ডিআই), বিভিন্ন চক্রের পরিদর্শকদের (এসআই) নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উঠে আসে, পূর্ব বর্ধমানের ছ’টি পুরসভা ও গ্রামীণ এলাকা মিলিয়ে ৭৫টি স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা কুড়ির কম। অথচ, ওই সব স্কুলের নিজস্ব ভবন রয়েছে। পরিকাঠামো রয়েছে। অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘এ নিয়ে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।’’ সংসদ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলায় শিক্ষক নিয়োগ হলেও এখনও সব স্কুলে শিক্ষক-সঙ্কট কাটেনি। ওই সব স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হবে। তাতে অনেক স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা মিটে যাবে।

সংসদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘পড়ুয়াহীন’ অবস্থায় রয়েছে বর্ধমান শহরে ১ নম্বর চক্রের শোলাপুকুর উর্দু প্রাথমিক স্কুল, ২ নম্বর চক্রের টিকরহাট নেতাজি প্রাথমিক স্কুল ও হারাধন দাস প্রাথমিক স্কুল। ১০ জন পড়ুয়াও নেই, কালনা পূর্ব চক্রে এমন গোটা ছয়েক স্কুলে। কেতুগ্রামে গোটা চারেক, কালনা ৩ চক্র, গলসি, রায়না ১ চক্র-সহ নানা এলাকার বিভিন্ন স্কুলেও এমন পরিস্থিতি। এক স্কুল পরিদর্শকের কথায়, “শহর বা শহর লাগোয়া স্কুলগুলিতে ২০১০ সালের পর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল। এখন তার ছোঁয়া লেগেছে প্রান্তিক এলাকাতেও। চিন্তাভাবনা শুরু না করলে ভবিষ্যৎ ভাল নয়।’’

এতগুলি স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে ভবনগুলির কী হবে, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি পরিকাঠামোর অভাবে অনেক দফতর ভাড়া নিতে হয়। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জিনিস থেকে খাদ্য দফতরের নথি গুদামঘরের অভাবে খোলা আকাশের নীচে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে। ভবন পেলে কাজে লাগানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন