ট্রেলারে গাড়ির ধাক্কা, মৃত দম্পতি

পুলিশ জানায়, শ্যাম প্রধান (৪৬) ও লক্ষ্মী প্রধান (৩৬) নামে ওই দম্পতি পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাসিন্দা। তাঁদের ছেলে সুমন পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালে একটি বেসরকারি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করতে মেয়ে রুবিকে নিয়ে তাঁরা এ দিন অণ্ডালে যাচ্ছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী শ্যামবাবু ও লক্ষ্মীদেবী গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন। চালক তপন মালের পাশের আসনে বসেছিলেন রুবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গলসি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:০০
Share:

দুর্ঘটনায় এমনই অবস্থা হয়েছে গাড়িটির। রবিবার সকালে পুরসায়। ছবি: কাজল মির্জা

নিয়ম ভেঙে জাতীয় সড়কের ধারে ট্রাক-ডাম্পার দাঁড়িয়ে থাকায় সমস্যায় পড়ছেন গা়ড়ি চালকেরা। দুর্ঘটনাও ঘটছে বারবার। নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তেমনই একটি ট্রেলারে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হল এক দম্পতির। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের মেয়ে ও গাড়িটির চালক। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে গলসিতে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। ট্রেলারটিতে ধাক্কা মারার আগে গাড়িটি এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয়। তিনিও গুরুতর জখম হয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, শ্যাম প্রধান (৪৬) ও লক্ষ্মী প্রধান (৩৬) নামে ওই দম্পতি পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাসিন্দা। তাঁদের ছেলে সুমন পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালে একটি বেসরকারি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করতে মেয়ে রুবিকে নিয়ে তাঁরা এ দিন অণ্ডালে যাচ্ছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী শ্যামবাবু ও লক্ষ্মীদেবী গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন। চালক তপন মালের পাশের আসনে বসেছিলেন রুবি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টা নাগাদ গলসির পুরসা হাসপাতাল মোড়ের কাছে শ্যামবাবুদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে তারিক হোসেন মল্লিক নামে এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয়। তার পরে প্রচণ্ড গতিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেলারে ধাক্কা মারে। পুলিশের অনুমান, গাড়ির সামনের একটি চাকা ফেটে যাওয়ার জেরেই চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। স্থানীয় বাসিন্দা রাকেশ মণ্ডল, কচি মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘পরপর দু’বার বিকট আওয়াজ শোনা যায়। তাতেই বুঝতে পারি দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ এলাকার মানুষজন গাড়িতে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন।

Advertisement

পুলিশ গাড়ির চার জন ও আহত সাইকেল আরোহীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, শ্যামবাবু ও লক্ষ্মীদেবীর মৃত্যু হয়েছে। তিন জনকে ভর্তি করানো হয়। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুবি ও খেজুরির রামচকের বাসিন্দা তপনবাবুকে পরে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পরে গা়ড়িটিতে থাকা বেশ কয়েক হাজার টাকা, মোবাইল ফোন-সহ কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা বুড়ো শেখ, শেখ সিরাজেরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাসে এক বার সুমনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন শ্যামবাবুরা। এ দিন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরে গলসি থানায় পৌঁছয় সুমন। তখনও তাকে বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। তবে পরিজনেরা পৌঁছনোর পরে তা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। সুমন বলে, ‘‘বাবা-মায়েরা প্রতি বার ১২টা-সাড়ে ১২টার মধ্যে আমার কাছে পৌঁছে যান। এ বার দেরি হচ্ছে দেখে বাবাকে ফোন করি। তখন পুলিশ ফোন ধরে জানায়, দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ শ্যামবাবুর দাদা রাম প্রধান বলেন, ‘‘প্রতি মাসেই নিজেদের গাড়িতে করে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যায় ভাইয়েরা। এমন দুর্ঘটনা ঘটবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন