দুর্নীতি ঢাকতে মাস্টার রোল ছিনতাই পঞ্চায়েতে, নালিশ

একশো দিনের কাজে গ্রামের অনেকে কাজ না পাওয়ায় তথ্য জানার অধিকারে মাস্টার রোল চেয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। কিন্তু পঞ্চায়েতের মধ্যেই তাঁর হাত থেকে কাগজটি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহালি পঞ্চায়েতের উষারানি চক্রবর্তী নামে ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, দিন তিনেক আগে পঞ্চায়েত ভবন থেকে নীচে নামতেই জোর করে কয়েকজন যুবক ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে নেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:৫০
Share:

একশো দিনের কাজে গ্রামের অনেকে কাজ না পাওয়ায় তথ্য জানার অধিকারে মাস্টার রোল চেয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। কিন্তু পঞ্চায়েতের মধ্যেই তাঁর হাত থেকে কাগজটি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহালি পঞ্চায়েতের উষারানি চক্রবর্তী নামে ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, দিন তিনেক আগে পঞ্চায়েত ভবন থেকে নীচে নামতেই জোর করে কয়েকজন যুবক ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিত ভাবে এটি করানো হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। মন্তেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে সিংহালী গ্রামে ঈদ পুকুর নামে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ হয়। ৩৩০৫-১৩০৮৫১২ কোড নম্বরের এই প্রকল্পে খরচ হয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৩৭৫ টাকা। তবে প্রকল্প চলাকালীন গ্রামের অনেকেই কাজ না পাওয়াই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। পরে এ বছরের ১০ জুন উষারানি দেবী তথ্য জানার অধিকারে বিডিও-র কাছে চিঠি পাঠিয়ে গ্রামের পুকুর সংস্কারের মাস্টার রোল দেখতে চান। ওই দিনই আবেদনকারীকে বিডিও পাল্টা একটি চিঠি ( মেমো নম্বর ১৮৮) দিয়ে জানিয়ে দেন যে এলাকার কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিসটেন্ট মাস্টার রোলটি দিতে পারবেন। ব্লক অফিস থেকে পঞ্চায়েতকে চিঠি পাঠিয়েও ওই বৃদ্ধাকে মাস্টার রোলটি দেওয়ার কথা বলা হয়।

এরপর ১১ জুন পঞ্চায়েতের তরফে চিঠি পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধাকে মাস্টার রোলটি নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু বৃদ্ধা ফের চিঠি পাঠিয়ে নিজের গ্রামের কার্যালয় থেকে মাস্টার রোলটি পাওয়ার আবেদন করেন। তবে সপ্তাহখানেক পরে বিডিও চিঠি পাঠিয়ে উষারানিদেবীকে জানিয়ে দেন, যে পঞ্চায়েত থেকেই রোলটি সংগ্রহ করতে হবে। কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতও তাঁকে জানিয়ে দেয়, ৩০ জুনের মধ্যে মাস্টার রোলটি নিয়ে যাওয়ার। এরপরেই ৩০ জুন দুপুরে পঞ্চায়েতে যান ওই বৃদ্ধা। মাস্টার রোলটি পেয়েও যান। প্রমাণ হিসেবে সই করিয়ে ছবিও তুলে রাখে পঞ্চায়েত। অভিযোগ, কাগজটি ব্যাগে ভরে নীচে নামতেই পথ আগলে দাঁড়ায় কয়েকজন যুবক। জোর করে ব্যাগটি ছিনিয়ে চম্পট দেয়। বৃদ্ধার দাবি, ব্যাগে কাগজটি ছাড়াও বেশ কিছু জিনিস ছিল। মন্তেশ্বর থানা প্রথমে অভিযোগটি নিতে চায়নি বলেও বৃদ্ধার দাবি। পরে ওসির নির্দেশে থানা অভিযোগটি নেয়। উষারানিদেবীর দাবি, ‘‘জব কার্ড থাকা স্বত্বেও এই প্রকল্পে গ্রামের অনেকে কাজ পাননি। কারা কতদিন কাজ পেয়েছে তা জানার জন্যই মাস্টার রোল চেয়েছিলাম।’’ দুনীর্তি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই পরিকল্পিত ভাবে ছিনতাই করানো হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ।

Advertisement

মন্তেশ্বর থানা জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পরেই বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ পঞ্চায়েতে যায়। কিন্তু তিনি কাউকে সনাক্ত করতে পারেননি। কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করী দাস বলেন, ‘‘ওই দিন আমি পঞ্চায়েতে নীচের তলার একটি ঘরে ব্যস্ত ছিলাম। মাস্টার রোলটি ওই মহিলাকে দেওয়া হয়েছে বলে জানি। তারপরে কী হয়েছে জানা নেই।’’ তাঁর দাবি, একশো দিনের কাজে কোনও দুর্নীতি হয়নি। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষও জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন