পালাবদলের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানেই সরকারের ‘সহিষ্ণুতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সর্বভারতীয় একটি টিভি চ্যানেল আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে যাদবপুরের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীকে ‘মাওবাদী’ বলে চিহ্নিত করে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠান ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন।
সেই তালিকায় নবতম সংযোজন ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সরকারি নির্দেশের কোনও রকম সমালোচনা যে রেয়াত করা হবে না, তা একরকম স্পষ্ট করে দিয়ে বুধবার, বর্ধমানে রেশন ডিলারদের একটি অনুষ্ঠান ছেড়ে সটান বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর যুক্তি, “ওখানে যে ভাবে সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছিল তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই বেরিয়ে এসেছি।”
কী হয়েছিল সেখানে?
বর্ধমানে পশ্চিমবঙ্গ এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলা কমিটির সভায় সংগঠনের সম্পাদক পরেশ হাজরার দাবি ছিল, রেশন ডিলারদের লাইসেন্স ফি বাবদ ১০ হাজার টাকা, লাইসেন্স নবীকরণ বাবদ আরও এক হাজার, ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসেবে ২৫ হাজার এবং ডিলারশিপ পেতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা সরকারের ঘরেজমা রাখা আবশ্যক। তার উপর পান থেকে চুন খসলে অন্তত পনেরো হাজার টাকার জরিমানা দিতে হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশ, ন্যূনতম ৬০০ বর্গ ফুট জায়গায় রেশন দোকান করতে হবে। গ্রাহকদের দাঁড়াতে আরও ২০০ বর্গফুট জায়গা দরকার। ক্ষুদ্র ডিলারদের উপর এতে প্রচণ্ড আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ব্যাপারটা সরকারের বিবেচনা করা উচিত। সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ!”
কিন্তু ততক্ষণে মন্ত্রী আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। রাগত গলায় এই সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!
এ সব আবার কী? আমাদের ডেকে নিয়ে এসে অপমান করা? এরা তো সরকার বিরোধী।” মন্ত্রী উঠে যাচ্ছেন দেখে একই সঙ্গে মঞ্চ ছাড়েন বিধায়ক তথা দলের পরিষদীয় সচিব উজ্জ্বল প্রামাণিক, সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলা পরিষদের চার কর্মাধ্যক্ষ, এমনকী জেলার তিন অতিরিক্ত জেলাশাসকও। উদ্যোক্তাদের বারবার মিনতি সত্ত্বেও তাঁরা আর সভায় ফেরেননি।
সর্বভারতীয় ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর প্রশ্ন, “মন্ত্রী কাছেই তো মানুষ তাঁদের দাবি দাওয়ার কথা বলবেন। সেটুকু শোনার সহিষ্ণুতা সরকারের বা মন্ত্রীর নেই?” স্বপনবাবু পাল্টা বলছেন, “দাবিদাওয়া থাকলে শুনতাম। কিন্তু ওরা প্রথম থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন।”
সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই গ্রেফতার হয়েছেন অম্বিকেশ, শিলাদিত্য। তা হলে রেশন ডিলার সংগঠনের ওই কর্তাকেও কি গ্রেফতার করা হবে? স্বপনবাবু বলছেন, “তখনই কোনও ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে পরে নিশ্চয় ওদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।”
যা শুনে রেশন ডিলারদের বক্তব্য, ‘সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ!’