পুলিশ ফাইল থেকে

খুনের পর দেহ পাতায় ঢেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা

রাতে পুকুরের মাছ দেখতে গিয়েছিলেন তিন জন। দু’জন এগিয়ে গিয়েছিলেন পুকুরের কাছে। এক জন দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু পিছনে। হঠাৎই পরপর দা, কুড়ুল, টাঙ্গির কোপ পড়তে থাকে খানিকটা পিছনে থাকা যুবকের দেহে।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

বুদবুদ শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২৩
Share:

খুন হয়েছিল এই পুকুরের পাড়েই। —নিজস্ব চিত্র

রাতে পুকুরের মাছ দেখতে গিয়েছিলেন তিন জন। দু’জন এগিয়ে গিয়েছিলেন পুকুরের কাছে। এক জন দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু পিছনে।

Advertisement

হঠাৎই পরপর দা, কুড়ুল, টাঙ্গির কোপ পড়তে থাকে খানিকটা পিছনে থাকা যুবকের দেহে। শুনতে পেয়ে ছুটে আসছিলেন পুকুরের কাছে থাকা দু’জন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ছিল দলে বেশ ভারী। তাড়া খেয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান দু’জন। খবর দেন গ্রামে গিয়ে।

বুদবুদের দেবশালার লবণধার গ্রামে ২০১৫ সালের ২ অগস্ট রাতে গ্রামবাসীরা এসে খোঁজাখুঁজি করে জঙ্গলে পাতা ঢাকা দিয়ে রাখা বিমান ঘোষের (২৩) দেহ উদ্ধার করেন। হাসপাতালে পাঠালে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। এমন ঘটনার পরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল গ্রাম। পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্তেরা পরে জামিনে ছাড়া পায়। মামলা বিচারাধীন দুর্গাপুর আদালতে।

Advertisement

ঝিঝিরা থেকে লবণধার যাওয়ার রাস্তার পাশে একটি বড় পুকুর রয়েছে। সেটিতে গ্রামের ১২ জন যুবক মিলে একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গড়ে কয়েক বছর ধরে মাছ চাষ করছেন। রাতে পুকুর থেকে মাছ চুরি যেত। কয়েক বার এ নিয়ে পাশের পাড়ার লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয় গোষ্ঠীর যুবকদের। নিহতের দাদা, ঘটনার মূল প্রত্যক্ষদর্শী বিধান ঘোষ জানান, সে দিন রাতে তাঁরা পুকুরের এক পাড়ে পিকনিকের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে বিমান-সহ সকলেই ছিলেন।

বর্ষার সময়ে পুকুরের জল অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। বিধানবাবু জানান, উল্টো দিকে পুকুরের যে পাড়ে মাছ চুরি হতো, সেখানে এক বার ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেই মতো তিনি, বিমান ও সীতারাম আঁকুড়ে নামে আর এক যুবক সে দিকে যান। সকলের হাতেই টর্চ ছিল। বিমান রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুকুরে দিকে এগিয়ে জাল দেখছিলেন বাকি দু’জন। বিধানবাবু অভিযোগ করেন, তখনই তাঁর ভাইকে জনা বারো লোক ঘিরে ধরে মারতে থাকে। তাঁরা টর্চ জ্বালালে ষ্কৃতীরা হুমকি দেয় ও তাড়া করে।

বিধানবাবুরা জানান, আধঘণ্টা পরে গ্রামের আরও অনেককে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে বিমানকে সেখানে খুঁজে পাননি। রাস্তায় তাঁর চটি, টর্চ পড়ে ছিল। পুকুরের অন্য পাড়ে গিয়ে দেখেন, সেখানে গামছা, হাতে থাকা ছাতাটি পড়ে রয়েছে। এর পরে পাশের জঙ্গলে খোঁজাখুঁজি করতেই গাছের পাতায় ঢাকা দেহ দেখতে পান এলাকার লোকজন। পরের দিন সকাল থেকে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার দাবিতে গ্রামে আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহতের মাথায়, মুখে, ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপ ছিল। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আশপাশের ঝিঝিরা, পরিশা গ্রাম থেকে একে একে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন জামিনে মুক্ত।

নিহতের দাদা বিধানবাবু অভিযোগ করেন, ওই অভিযুক্তরা এখন তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে। রাস্তায় আটকে মারধরেরও চেষ্টাও করেছে। বিধানবাবু বলেন, ‘‘ভয় দেখালেও পিছপা হব না। আমার ভাইকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’’

বুদবুদের দেবশালার লবণধার গ্রামে ২০১৫ সালের ২ অগস্ট রাতে খুন হন বিমান ঘোষ (২৩)।

ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দেহ পাশের জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে যায় জনা বারো দুষ্কৃতী।

আশপাশের গ্রাম থেকে একে-একে ১১ জন গ্রেফতার।

ধৃতেরা জামিনে মুক্ত। মামলা দুর্গাপুর আদালতে বিচারাধীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন