প্রশ্নে পুলিশি নজরদারি

অপরাধীর ‘আশ্রয়’ লছিপুর

এলাকার মহিলারা জানান, অনেক সময়েই বহু মানুষের ভিড়়ে আলাদা করে দুষ্কৃতীদের চেনা যায় না। ঠিক যেমনটি হয়েছিল, ২০১৭-র ৭ অগস্ট।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

কুলটি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৫
Share:

এই এলাকাতেই নজরদারির অভাব নিয়ে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

কখনও খবর মেলে, লুঠতরাজ চালানো দুষ্কৃতীরা ঠেক বসিয়েছে এখানে। কখনও বা অস্ত্র, মাদক-সহ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।— সব ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থল একই, কুলটির লছিপুর। পুলিশের দাবি, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গ্রেফতার হওয়া অপরাধীরা ঝাড়খণ্ড-সহ ভিন্-রাজ্যের বাসিন্দা। পুলিশকর্তাদের একাংশের মতে, এই এলাকায় ‘আশ্রয়’ নিয়ে ‘আত্মগোপন’ করে থাকছে অপরাধীরা। এলাকাবাসীরও একাংশের ক্ষোভ, এর জেরে লছিপুর তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও সমস্যা হচ্ছে।

Advertisement

কী ধরনের অপরাধীরা ঠাঁই নিচ্ছে এই এলাকায়? আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার সঙ্গে কথা বলে সাম্প্রতীক অতীতের বেশ কিছু ঘটনার কথা জানা গেল।

ঘটনা এক: হারুন আনসারি, আইনুল মিঞা। দু’জনেই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। পুলিশের খাতায় লুঠ, খুন, ছিনতাই, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে দু’জনের নামে। বছরখানেক আগে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার নারায়ণপুরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ৫০ হাজার টাকা লুঠের অভিযোগের পরে অভিযান শুরু করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। নজরদারি বা়ড়ানো হয় পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তেও। কিন্তু দু’জনের টিকিটরও হদিস মেলেনি। শেষমেশ লছিপুরে দুই রাজ্যের পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ জানায়, অস্ত্র, গুলি-সহ ধরা পড়ে দু’জনেই। ঝাড়খণ্ডের মাইথন, জামতাড়া, মিহিজাম, নিরশা নারায়ণপুর, তোপচাঁচ এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে অভিযুক্ত ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীর হদিস পায় পুলিশ।

Advertisement

ঘটনা দুই: এলাকার মহিলারা জানান, অনেক সময়েই বহু মানুষের ভিড়়ে আলাদা করে দুষ্কৃতীদের চেনা যায় না। ঠিক যেমনটি হয়েছিল, ২০১৭-র ৭ অগস্ট। এক ব্যক্তির কোমরে ‘পাইপগান’ দেখে সন্দেহ হয় এক মহিলার। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জানায়, ধৃত দীপক দে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের চিরকুণ্ডা থানার পাতলাবাড়ির বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সদলবলে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল দীপকের। এর আগে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লছিপুরে আশ্রয় নেয় ওই ব্যক্তি।

ঘটনা তিন: কয়েক মাস আগে এই এলাকাতেই আত্মগোপন করে থাকা বিজেন্দ্র সিংহকে অস্ত্র ও মাদক-সহ গ্রেফতার করে নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশের দাবি, হরিয়ানার চুহাপুরের বাসিন্দা ওই বাসিন্দা আদতে হেরোইন কারবারি।

ঘটনা চার: নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, সম্প্রতি এই এলাকা থেকেই বিহারের গয়ার বাসিন্দা তিন অস্ত্র-কারবারিকে ধরা হয়। তা ছাড়া ২০১৭-র ১৪ নভেম্বর এই এলাকা থেকেই জামতা়ড়ার বাসিন্দা রাজাউদ্দিন আনসারি নামে এক জনকে অস্ত্র-সহ ধরা হয় বলে পুলিশ জানায়।

এ ছাড়া লছিপুর ও চবকায় জুয়ার ঠেক, বখরা নিয়ে নানা দলের লড়াই-সহ নানা কারণে এলাকায় গোলমাল বাড়ছে বলেও অভিযোগ।

একই এলাকা থেকে একের পরে এক অপরাধীর গ্রেফতার ও গোলমালের পরে এলাকাবাসীর অভিযোগ, আসলে নজরদারিতে খামতির সুযোগেই এমনটা ঘটে। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ রয়েছে ভিন্-রাজ্যের এই দুষ্কৃতীদের। তাদের মারফতই এলাকার তথ্য চলে যায় পড়শি রাজ্যের সমাজবিরোধীদের কাছে। পুলিশ জানায়, মাসখানেক আগে এই এলাকারই বাসিন্দা সুনীল পাসোয়ানকে ধরা হয়। পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি ভিন্-রাজ্যের দুষ্কৃতীদের নিয়ে অপরাধের ছক কষেছিল। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকার ‘ভৌগলিক সুবিধা’ও দুষ্কৃতীরা নিচ্ছে বলে দাবি পুলিশের।

এর ফলে কুলটি, নিয়ামতপুর-সহ জেলার নানা প্রান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও নজরদারিতে খামতির বিষয়টি মানতে চায়নি পুলিশ। পুলিশের দাবি, ওই এলাকায় ২৪ ঘণ্টা ধরে নজরদারি চলে। সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে। তা ছাড়া নিয়মিত অভিযানও চালানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন