ঘড়িতে ১টা, ছুটির ঘরে সই

শীতের দুপুরে একটু গা এলিয়েই কাজ করছিলেন কর্মীরা। হঠাৎ ‘হাজিরা খাতাটা দেখি’ শুনে খানিক চমকে ওঠেন। ঘাড় তুলে দুই কর্তাকে দেখে চমক বাড়ে আরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
Share:

হাজিরা খাতা দেখছেন জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র।

শীতের দুপুরে একটু গা এলিয়েই কাজ করছিলেন কর্মীরা। হঠাৎ ‘হাজিরা খাতাটা দেখি’ শুনে খানিক চমকে ওঠেন। ঘাড় তুলে দুই কর্তাকে দেখে চমক বাড়ে আরও। নির্দেশ মেনে হাজিরা খাতা খুলতেই দেখা যায়, কেউ কারণ ছাড়াই অনুপস্থিত, কেউ আবার দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সই করে দিয়েছেন ছুটির জায়গায়।

Advertisement

মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মলকে নিয়ে ছ’তলা প্রশাসনিক ভবনের একাধিক দফতরে অভিযান চালান জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। প্রথমেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান দোতলার একটি দফতরে। হাজিরা খাতায় দেখা যায় বেশ কয়েকজন কর্মী কারণ ছাড়াই অনুপস্থিত। সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকের কাছেও কোনও ছুটির আর্জি আসেনি। ওই সব কর্মীর হয়ে বাকিরা সওয়াল করলেও জেলাশাসক তাঁদের কথা মানতে চাননি।

পাশের ঘরেই রয়েছে প্রশাসনের সাধারণ বিভাগ। সেখানে গিয়েও চক্ষু চড়কগাছ জেলাশাসকের। হাজিরা খাতা খুলে দেখা যায়, বেলা ১টা তেই ছুটির জায়গাতে সই করেছেন কর্মীরা। জেলাশাসকের টিপ্পনী, ‘এত তাড়া! অফিস থেকে যাওয়ার আগেই সই করে ফেলেছেন’।

Advertisement

পাশের ঘরে আবার উল্টো ছবি। দেখা যায়, দুই কর্মী নিয়মিত অফিসে এলেও হাজিরা খাতায় তাঁরা গরহাজির। তাঁদের মধ্যে এক তরুণ কর্মী তো গত পাঁচ দিন ধরে সই-ই করেননি। কেন? ওই দুই কর্মীর দাবি, ‘‘স্যার, আমরা নিয়মিত আসি। কিন্তু পরে করব ভেবে সই করা হয়নি।’’ জবাব শুনে জেলাশাসক অতিরিক্ত জেলাশাসককে ওই দু’জনকে শো-কজ করার কথা বলেন। আর ওই দুই কর্মীকে বলেন, ‘‘আমরাও চিঠি খেয়েছি। তোমরাও খাও। তাহলেই এ ধরণের আর গাফিলতি হবে না।’’

এ বার পাড়ি জেলা নির্বাচনী দফতরে। ঘরের দু’পাশে ডাঁই করে রাখা বাতিল আসবাব। সে দিকে তাকিয়ে জেলাশাসকের নির্দেশ, ‘‘অনেক দিন তো হল, এ বার নিলাম করে দিন।’’ দফতরের ঢুকেও বেশ কয়েকজন কর্মীর দেখা মেলে না। খাতায় পড়ে ঢ্যাঁড়া। বড়বাবুর যদিও দাবি, ‘‘স্যার, মাটি মেলার স্টলে গিয়েছেন কর্মীরা।’’ জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘আপনি সে কথা শো-কজের জবাবে লিখে দেবেন।’’

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে আবার হাজিরা খাতা হাতে নিয়েই জেলাশাসক দেখেন, কর্মীর গরহাজিরার জন্য ‘লাল কালি’ দেওয়া রয়েছে। জেলাশাসকের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের অভিযানের পরে কালির দাগ দিলেন তো?’’ কাঁচুমাচু মুখ করে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতের আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় রক্ষিত বলেই ফেলেন, ‘‘হ্যাঁ, স্যার।’’

তবে তিনটে তলা ঘোরার পরেই দুই কর্তা বোঝেন অভিযানের খবর ছড়িয়ে গিয়েছে। এ দিনের মতো অভিযানে দাঁড়ি টানেন তাঁরাও। তবে ফিরতি পথে নজরে আসে পুরো ভবন জুড়ে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের অভাব। প্রতিটি তলাতেই বড় বড় করে ‘নো স্মোকিং জোন’ লেখা থাকলেও সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টর দফতরের এক প্রবীণ কর্মীকে কম্পিউটারের সামনে বসে ধূমপান করতে দেখা যায়। কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘরের মধ্যে ধুমপানেরও অভিযোগও কানে আসে জেলাশাসকের। সৌমিত্র মোহনের নির্দেশ, ‘‘আধিকারিকদের নিয়ে একটা স্কোয়াড তৈরি করে আচমকা হানা দিন, আর ধরে ধরে ব্যবস্থা নিন।’’ আর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলি আপাতত মাটি মেলায় নিয়ে গিয়ে লাগানো হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ২২ জন কর্মীকে শো-কজ করা হয়েছে। জেলাশাসক জানান, মহকুমাশাসকদেরও অভিযান চালানোর জন্য বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন