Nirmal Bangla Mission failed

টাকা দিয়েও মেলেনি শৌচাগার, অভিযোগ দুর্গাপুরে

হ্যানিমান সরণির ঠিক পাশে নতুনপল্লি আদিবাসীপাড়া। প্রায় ৭০টি পরিবরের বসবাস। টালির চালের পর-পর ঘর। রাস্তা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নিকাশি জল। রাস্তার কলে সরু সুতোর মতো জল পড়ছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩৮
Share:

এলাকায় ‘আকাল’ পানীয় জলের। নিজস্ব চিত্র

হয় কোনও রকমে ইটের দেওয়াল খাড়া করে টিনের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। না হলে, দেওয়াল তৈরিই হয়নি। চট দিয়ে ঘেরা জায়গায় শৌচকর্ম সারতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। টাকা দোওয়া হলেও ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে পুরসভা উপযুক্ত শৌচাগার গড়ে দেয়নি। বেহাল নিকাশি। আকাল পানীয় জলেরও। দুর্গাপুরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বীরসা মুন্ডা কলোনির বাসিন্দারা এমন নানা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগও।

Advertisement

হ্যানিমান সরণির ঠিক পাশে নতুনপল্লি আদিবাসীপাড়া। প্রায় ৭০টি পরিবরের বসবাস। টালির চালের পর-পর ঘর। রাস্তা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নিকাশি জল। রাস্তার কলে সরু সুতোর মতো জল পড়ছে। জল নিয়ে এলাকায় অশান্তি লেগেই থাকে। স্থানীয়েরা জানান, পুরসভার গড়ে দেওয়া কমিউনিটি শোচাগার বেহাল! কিন্তু এ সবের থেকেও বাসিন্দারা বেশি সরব মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের শৌচাগার নিয়ে। বছর পাঁচেক আগে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার গড়ার প্রকল্প হাতে নেয় পুরসভা। কিন্তু সে সব শৌচাগার নিয়েই বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মণ রুইদাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শৌচাগারের টিনের দরজায় লেখা, শৌচাগার গড়তে ১০৯৯০ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মণ দিয়েছেন এক হাজার টাকা। পরিবারের সদস্য সরস্বতী বলেন, “আমরা নিজেরাই পুরো খরচ করে শৌচাগার তৈরি করেছি। অথচ ঠিকা সংস্থার লোকজন এসে টিনের দরজায় এ সব লিখে দিয়ে যান।” এক চিলতে ঘরের দাওয়ায় বসেছিলেন লক্ষ্মীমণি সরেন। অসুস্থ, হাঁটাচলা করতে পারেন না। কোনও রকমে ক্রাচ নিয়ে হাঁটেন। তাঁর অভিযোগ, টাকা নেওয়া হলেও, শৌচাগার গড়ে দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, বছর পাঁচেক আগে শৌচাগার করার কথা জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে আটশো টাকা নেওয়া হয়েছিস। তিনি বলেন, “বহু কষ্ট করে টাকাটা জোগাড় করতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম, শৌচাগার হলে রাতবিরেতে সুবিধা হবে। হল না। আমি বাইরে কোথাও যেতে পারি না। নর্দমায় শৌচকর্ম সারতে হয়।” আরেক বাসিন্দা দালালি টুডু জানান, প্রথমে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। কাজ শেষ হলে বাকি ৫০০ টাকা দিতে বলা হয়। কিন্তু শৌচাগার তৈরিই হয়নি। কিছু বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ইটের দেওয়াল নেই। চট দিয়ে ঘেরা জায়গায় শৌচকর্ম সারতে হয় বাসিন্দাদের। তেমনই এক জন নমিতা মুন্ডা বলেন, “আমি আটশো টাকা দিয়েছিলাম। বলেছিল, শৌচাগার গড়ে দেওয়া হবে। হয়নি। তাই চট টাঙিয়ে কোনও রকমে শৌচকর্ম সারতে হচ্ছে আমাদের। দিনে ২০০ টাকা রোজগার। চার দিনের রোজগারের টাকা চলে গিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা আদিবাসী লোকশিল্পী সঙ্ঘের সম্পাদক মনু সোরেনের অভিযোগ, “বীরসা মুন্ডা কলোনিতে শৌচাগার গড়ার নামে চরম আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। অনেকে টাকা দিয়ে শৌচাগার পাননি। আবার যাঁদের হয়েছে সেগুলি অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক শৌচাগারই ভেঙে গিয়েছে। দুঃস্থ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে।”

Advertisement

ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শশাঙ্কশেখর মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ২০১৭-র আগে সেখানে সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন। এ সব সে আমলেই হয়েছে। তিনি বলেন, “বাসিন্দারা কখনও লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ করলে পুরসভা তদন্ত করবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থাকে তলব করে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও, অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের প্রতিক্রিয়া, “ডাঁহা মিথ্যা কথা। প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে চরম দুর্নীতি হয়েছে। ফল ভোগ করছেন সাধারণ দুঃস্থ মানুষ।” অভিযোগে আমল দেননি শশাঙ্কশেখর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন