এই গাড়ির মাধ্যমেই নজরদারি। ছবি: পাপন চৌধুরী
মাস তিনেক আগে দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সীমানা এলাকায় পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু, তার পরেও পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় অপরাধের একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সীমানা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি আঁটোসাটো করতে বিস্তারিত প্রকল্প তৈরির কথা জানিয়েছে পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী ওই সভায় পুলিশকে লক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘সীমানায় নাকা চেকিং করেন? সীমানা এলাকা দিয়ে বোমা ঢুকছে, অস্ত্র ঢুকছে, টাকা ঢুকছে। এগুলো যাতে না হয় ভাল করে দেখতে হবে। গোটা সীমানায় সিসিটিভি এবং ওয়াচ টাওয়ারে নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।’’ এই বক্তব্যের পরেই শুরু হয় সীমানা এলাকায় আরও কড়াকড়ি।
কিন্তু তার পরেও অপরাধের বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে। যেমন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতার গিরিশপার্ক থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মনোজ খাণ্ডেলওয়ালকে ঝাড়খণ্ড-সীমানা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে উদ্ধার করে সালানপুর থানার পুলিশ। তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা, জানায় পুলিশ। এর ঠিক সাত দিনের মাথায় ২১ ফেব্রুয়ারি রূপনারায়ণপুরে বিহার রোড থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা জাল নোট-সহ ঝাড়খণ্ড থেকে আসা দুই দুষ্কৃতীকে ধরা হয় বলে জানায় পুলিশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের নিয়ামতপুরের অদূরে ডুবুরডিহি সীমানা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার আগে চিত্তরঞ্জন রোড লাগোয়া একটি নার্সিংহোমের এক মহিলা কর্মীর থেকে মোবাইল টাকা ও সোনার গয়না ছিনতাই করে চম্পট দেয় দুই দুষ্কৃতী। ওই দুষ্কৃতীরাও ঝাড়খণ্ডের বলেই সন্দেহ করেছিল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সীমানা এলাকায় দিনভর নাকাবন্দি ছাড়া নজরদারিতে তেমন বিশেষ কিছু করা হয় না। অথচ, এই সীমানা এলাকাটির ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই শুধু নাকাবন্দি করে অপরাধমূলক কাজকর্ম আটকানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসীর একাংশ। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় রূনারায়ণপুর, বরাকর, চিত্তরঞ্জন ও ডুবুরডিহিতে চারটি সড়ক ধরে ঝাড়খণ্ডে যাওয়া যায়। ফি দিন কয়েক হাজার ছোটবড় গাড়ি ও লক্ষাধিক বাসিন্দা যাতায়াত করেন এই রাস্তাগুলি দিয়ে।
এই চারটি এলাকাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানান, চার জায়গায় দু’টি করে মোট আটটি ‘ওয়াচ টাওয়ার’ তৈরি হচ্ছে। সেই টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে একাধিক পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। তাঁদের কাছে ‘নাইট ভিশন’ দূরবীণ থাকবে। সীমান্তের একশো মিটার ব্যাস এলাকা জুড়ে ৬৪টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে। বিশেষ ‘কন্ট্রোলরুম’ গড়ে সেই সিসিটিভি ক্যামেরায় তোলা ছবির উপরে নজরদারি চালাবেন কন্ট্রোল রুমে থাকা পুলিশকর্মীরা। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তাঁরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত সীমানায় থাকা মজুত পুলিশকর্মীদের খবর পাঠাবেন। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক ক্যামেরা লাগানো একটি গাড়ি অনবরত ঘুরে ঘুরে সীমানা এলাকায় ঢোকা-বেরনো সব গাড়ির ছবি তুলে সংরক্ষণ করছে। এই গাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার’। সংরক্ষণের ফলে পরে প্রয়োজন মতো তদন্তের স্বার্থে ছবিগুলি পরীক্ষা করা হবে। অনমিত্রবাবু বলেন, ‘‘সীমানা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখতে আমরা কোনও খামতি রাখছি না।’’ লোকসভা ভোটের আগেই নজরদারি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।