ওষুধ বিকোচ্ছিল না, বাধ্য হয়ে পুরনো নোটই নিচ্ছে আসানসোলের দোকান।
কিছু এটিএম চালু হওয়ায় নোট নিয়ে ভোগান্তি খানিক কমলো শিল্প-শহরে। তবে শহর ছেড়ে একটু গ্রামের দিকে গেলেই ব্যাঙ্কের সামনে সেই লম্বা লাইনের ছবি। কোথাও আগের রাত থেকে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় জমিয়েছেন বাসিন্দারা। কেউ আবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও পেলেন না টাকা।
এটিএম সচল হওয়ায় ব্যাঙ্কের সামনে লাইন আগের কয়েক দিনের তুলনায় কমেছে দুর্গাপুরে। তাই গ্রাহকদের পুরনো নোট বদল করতে কম সময় খরচ করতে হয়েছে। আসানসোলে কিছু কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় লিঙ্ক চলে যাওয়ায় কাজ ব্যাহত হয়। তবে কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন এডিসিপি (পশ্চিম) অনামিত্র দাস। তবে পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কিছু জায়গায় কেপমারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে খবর মিলেছে। মঙ্গলবার আসানসোলের মুখ্য ডাকঘরে টাকা জমার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির পকেট থেকে টাকা চুরি যায়। বুধা গ্রামের ওই বাসিন্দা দক্ষিণ থানায় বিষয়টি জানান। এসিপি (সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য বলেন, ‘‘লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া পুলিশি পাহারার ব্যাবস্থা হয়েছে।’’
গলসির পুরষায় ভোর থেকে লাইন। নিজস্ব চিত্র।
গলসির পুরষায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই অনেকে লাইন দেন। রাতেই সেখানে কম্বল পেতে ঘুমোন কেউ-কেউ। পারাজ থেকে শিল্যাঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ওই ব্যাঙ্কের এটিই একমাত্র শাখা। সন্ধে ৬টা নাগাদ রামগোপালপুরের বাসিন্দা জাকির মল্লিক লোটাকম্বল নিয়ে চলে আসেন ব্যাঙ্কের সামনে। তিনি বলেন, ‘‘আলু চাষ করব। বীজ কিনতে পারছি না। দু’দিন সকাল থেকে লাইন দিয়ে টাকা পাইনি। তাই আর ঝুঁকি নিতে চাইনি।’’ খবর ছড়িয়ে পড়তে একে-একে আরও অনেকে আসেন। রাত ৮টা নাগাদ দেখা যায়, প্রায় শ’খানেকের লাইন। রাতে সেখানেই ছিলেন মানুষজন। বুধবার সকালে আরও অনেকে লাইন দেন। এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ যখন ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়, তখনও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। ঠিক দু’জনের পিছনে ছিলেন সুজাপুরের প্রৌঢ়া ডালিয়া বেগম। মুখের সামনে দরজা বন্ধ হতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে লাইন দিয়েও টাকা পেলাম না।’’
মানকরে তিনটি এটিএম বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের সমস্যা হয়। ভিড় জমে ব্যাঙ্কে। মঙ্গলবার নানা ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছিল, নোট বদল করতে প্রবীণদের জন্য পৃথক লাইন থাকবে। কিন্তু বুধবার প্রায় কোথাও সেই উদ্যোগ নজরে পড়েনি। ঘোষণা অনুযায়ী শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় নোট পাল্টাতে আসা মানুষজনের আঙুলে কালিও লাগানো হয়নি এ দিন।