গুজবে পিটুনি মেরে ফেললে কী হতো, শঙ্কিত মা

সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে মারধরে অসুস্থ ছেলে। তাঁকে দাওয়ায় শুইয়ে পাশে গালে হাত দিয়ে বসে প্রৌঢ়া মা। ‘‘ছেলে তো প্রায়ই এ দিক, ও দিক বেরিয়ে যায়! ওরা যদি মেরে ফেলত...!’’ কথা আর শেষ হয় না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:১১
Share:

মায়ের সঙ্গে পলাশ। নিজস্ব চিত্র

সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে মারধরে অসুস্থ ছেলে। তাঁকে দাওয়ায় শুইয়ে পাশে গালে হাত দিয়ে বসে প্রৌঢ়া মা। ‘‘ছেলে তো প্রায়ই এ দিক, ও দিক বেরিয়ে যায়! ওরা যদি মেরে ফেলত...!’’ কথা আর শেষ হয় না!

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যায় বরমপুর গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির পরে একাইহাটের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মা কিছুতেই যেন স্বাভাবিক হতে পারছেন না। স্থানীয়েরা জানালেন, সম্প্রতি বাজার গ্রামে দুই শিশুর নিখোঁজ হতেই গ্রামবাসী অচেনা কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেখলেই সন্দেহ করত। ওই দিনও পলাশকে ঘুরতে দেখে তাঁর পিছু নেয় অনেকে। পালিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে বরমপুরে চলে এলেও রেহাই পাননি। সেখানেই জোট প্রবল মার।

বরমপুর বাসস্ট্যান্ডের চা ব্যবসায়ী সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই যুবক আমার দোকানে চা খায়। তার কিছু পরেই দেখি প্রায় পাঁচশো লোক ওর পিছু নিয়েছে।’’ পলাশকে বাঁচাতে গিয়ে উন্মত্ত জনতার হাতে প্রহৃত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ভুবনেশ্বর সাহা, চন্দ্রকুমার সাহারা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাজারের লোকের সঙ্গে আমাদের গ্রামেরও কিছু লোক ছিল। ওরা যুবকের উপর চড়াও হলে আমরা আগলাই। তখনই আমাদের উপরে লাঠির ঘা এসে পড়ে।’’

Advertisement

ছেলেধরা গুজবে কান না দেওয়ার জন্য পুলিশ, প্রশাসনের এত প্রচারের পরেও এমন অবস্থা কেন? বরমপুরের তপন মণ্ডল, শান্তিপদ মণ্ডলদের কথায়, ‘‘আমরা বিষয়টি জানি, তাই ওকে বাঁচিয়েছি। না হলে হয়তো ছেলেটা বাঁচত না।’’ ঘটনার আগে গুজবের বিরুদ্ধে গ্রামে প্রচার না হলেও মঙ্গলবার স্থানীয়েরা গ্রামে মাইকে প্রচার করেন। গুজবে কান না দেওয়ার বার্তা ছিল তাতে। তবে বাজার গ্রামে মিলল উল্টো চিত্র। স্থানীয় মদন মাঝি, সুগ্রীব পালদের কথায়, ‘‘এগুলো যে গুজব জানা ছিল না। কোনও প্রচারও হয়নি গ্রামে।’’

মঙ্গলবার একাইহাটে প্রহৃত পলাশ পালের বাড়ি গিয়ে দেখা মিলল তাঁর মা ও বোনের। টিনের চালের এক কামরা ঘরে বছর ত্রিশেক ধরে বাস পাল পরিবারের। পাঁচ বছর বয়সে বাবা প্রশান্ত পাল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই মা দেবী পাল ও বোন জয়ীর সঙ্গে থাকেন পলাশ। পানুহাট রাজমহিষীর পড়ুয়া পলাশ মেধাবি ছাত্র ছিল। তবে আর্থিক অনটনে আর স্কুলের গণ্ডী পেরোনো হয়নি তাঁর। বিয়েও করেছিলেন। বছর সাতেকের এক ছেলেও রয়েছে পলাশের। এ দিন বোন জয়ী বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগে মা অসুস্থ হলে দাদা মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যায়। বৌদিও ভাইপোকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকেই এ দিক ও দিক উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়। কখনো বাড়িও ফেরে না।’’ বছর দু’য়েক আগে কে বা কারা পলাশের গায়ে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল বলেও জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন