মণ্ডপে বনের ছোঁয়া। ডান দিকে, মোগলির মডেল। নিজস্ব চিত্র।
শহর এ বার ‘মোগলি’ময়।
গ্রাম দিয়ে ঘেরা বর্ধমান শহরে সবুজ ক্রমশ কমছে। মাথা তুলছে বহুতল বাড়ি। কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজের প্রয়োজন বোঝাতে এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখলে যে মানুষেরই লাভ, সেই বার্তা দিতে শহরের দুটো বড় পুজো এ বার থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘দ্য জঙ্গল বুক’-এর চরিত্র মোগলিকে।
ময়ূর মহলের মাতৃ সঙ্ঘের উদ্যোক্তাদের দাবি, মোগলির মাধ্যমে তাঁরা দর্শকদের জানানোর চেষ্টা করবেন অরণ্য সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন। কিছুটা দূরের শ্যামলাল সর্বজনীনও বহুতলের হাত থেকে বাঁচতে সবুজায়নের কথা তুলে ধরবে মোগলির মাধ্যমেই। ময়ূর মহলের পুজো এ বার চার বছরে পা দিল। তাদের মণ্ডপে মোগলির সঙ্গী ‘ব্ল্যাক প্যান্থার।’ আর ৭২ বছরে পা দেওয়া শ্যামলাল সর্বজনীনে মোগলির সঙ্গে থাকছে ‘বাঘিরা’, ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ছাড়াও নানা রকমের সাপ, হরিণ, বাঁদর, শিম্পাঞ্জির দল।
একটি বাড়ির ভিতর ১০ কাঠা জায়গার উপর থাকা বাগান বাড়িকে ব্যবহার করে মণ্ডপ তৈরি করছে ময়ূর মহলের মাতৃ সঙ্ঘ। সেখানেই বিভিন্ন প্রজাতির বীজ ফেলে গাছ তৈরি করা হয়েছে। জঙ্গলের এক পাশে ধান চাষের দৃশ্যও তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও অর্কিড, গুল্ম জাতীয় গাছ জঙ্গলে রেখেছেন উদ্যোক্তারা। শুধুমাত্র গাছ দিয়েই গুহা তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, গুহার মধ্যে নানা রকম পাখির ডাক শোনা যাবে। সেখানেই দেবী মূর্তির কাছে ব্ল্যাক প্যান্থার কাঁধে নিয়ে মোগলী দর্শকদের স্বাগত জানাবে। ক্লাবের অন্যতম কর্তা আর পি সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশনায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ১৫ জন কারিগর দিনরাত এক করে এই মণ্ডপ তৈরি করছেন। মোগলির মাধ্যমে ছোট থেকে বড় সকলের সামনে একটাই বার্তা দিতে চেয়েছি, বনসৃজনের প্রয়োজনীয়তা কেন রয়েছে। তাই গাছের মায়াজাল তৈরি করে একটা নতুন বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’
শ্যামলাল সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে কলকাতার একটি আর্ট কলেজের শিক্ষক প্রেম বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতের ছোঁয়ায়। মণ্ডপ-সজ্জায় মূলত থার্মোকল, কাঠের গুঁড়ো, কাগজ, গাছ, বাঁশ ইত্যাদির ব্যবহার করা হয়েছে। জঙ্গলের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে রয়েছে ছোট ডোবা। মণ্ডপের সামনেই থাকছে মোগলি। তাকে টপকেই দেবী প্রতিমার কাছে পৌঁছতে হবে দর্শকদের। এই পুজো কমিটির সম্পাদক চঞ্চল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বনজ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বহুতল বাড়ির ছোঁয়া বাঁচিয়ে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারবেন দর্শকরা।’’
তবে শহরবাসী মোগলিকে দেখে মণ্ডপেই ফেলে আসবেন, না কি তার সচেতনতার বার্তা বাড়িতেও বয়ে আনবেন, সেটাই এখন দেখার।