হাসপাতাল সাফ রাখতে হাত লাগাবে পুরসভা

নিয়মিত সাফাই, পানীয় জলের সমস্যা থেকে নিকাশি— কালনা মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে উঠে এল একের পর বেহাল পরিষেবার অভিযোগ। চিকিৎসক, নার্স থেকে গ্রুপ ডি কর্মীদের অভাবের কথা শুনে শেষমেশ স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০০:১৯
Share:

হাসপাতালে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

নিয়মিত সাফাই, পানীয় জলের সমস্যা থেকে নিকাশি— কালনা মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে উঠে এল একের পর বেহাল পরিষেবার অভিযোগ। চিকিৎসক, নার্স থেকে গ্রুপ ডি কর্মীদের অভাবের কথা শুনে শেষমেশ স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বুধবার বেলা আড়াইটে নাগাদ মহকুমা হাসপাতালে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির, ভূমি এবং প্রাণিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, কালনা পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ, মহকুমাশাসক শুভাশিস বে‌জ, মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই ও অন্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়। মন্ত্রী স্বপনবাবু প্রথমেই জানতে চান হাসপাতালের পরিষেবার খতিয়ান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দু’বছরে পরিষেবা বেড়েছে। কমেছে রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ। জানানো হয়ে ২০১৫ সালে মহকুমার মানুষের প্রধান ভরসা এই হাসপাতালে বর্হিবিভাগ থেকে পরিষেবা পেয়েছেন ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ। বেড়েছে অপারেশনের সংখ্যা। শিশুদের জন্য খোলা হয়েছে এসএনএসইউ, এসএনসিইউ এবং এইচডি ইউনিট। রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে, বিশেষ করে মহিলা এবং প্রসূতি বিভাগে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বসেছে সিসিটিভি। সুপার জানান, সিসিটিভির ফুটেজ নিজের মোবাইলে দেখতে পান তিনি। ফলে রাতে বাড়িতে থাকলেও নজরদারির অভাব হয় না।

এরপরে ওঠে খামতির প্রসঙ্গ। অভিযোগ ওঠে, বর্ষায় হাসপাতালে ঢোকার মুখে জল জমে যায়। ঠিক হয় হাসপাতাল লাগোয়া এসটিকেকে রোডের পাশ দিয়ে একটি নালা তৈরি করা হবে। যেটি মিশবে ভাগীরথী নদীতে। বৈঠকে মহকুমাশাসক পূর্ত দফতরের এক আধিকারিককে দ্রুত পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেন। জানা যায় কালভার্টের সামনে জমে রয়েছে প্রচুর ছোট ছোট পাথর। ফলে নিকাশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্বপনবাবু বৈঠকে উপস্থিত হাটকালনা পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের কালভার্টের মুখের পাথর সরিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা জানান। পঞ্চায়েত তাতে সম্মতি দেয়। হাসপাতালে রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। বাইরে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে দায়িত্ব দেওয়া কালনা ১-এর বিডিও এবং কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে। ঠিক হয় হাসপাতালের ভিতরেও পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। ওঠে সাফাই সমস্যার কথাও। স্বপনবাবু নদিয়ার প্রতাপনগর হাসপাতালের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে জানান সাফাইকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যাতে ভিতরে ঢুকলেই ভাল লাগে রোগী এবং তাঁর আত্মীয়দের। সাফাইয়ে পুরসভা সাহায্য করবে বলেও ঠিক হয়। সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি ১৫ দিনে হাসপাতাল সাফ করবে কালনা পুরসভা। দৈনন্দিন জমা জঞ্জালও নিয়ে যাবে।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত ডোম নেই। যে দু’জন রয়েছেন তাঁরা স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করতে চান না বলে অভিযোগ। সিদ্ধান্ত হয়, ডোমদের দৈনিক পারিশ্রমিক ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৬১ টাকা করা হবে। প্রয়োজনে আরও চুক্তি ভিত্তিক ডোম নিয়োগ করা হবে। হাসপাতাল লাগোয়া ১০০ মিটারের মধ্যে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা আনার সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয় এই নির্দেশিকা সুপার হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকদের জানিয়ে দেবেন। স্বপনবাবু প্রস্তাব দেন হাসপাতালের ভিতর রোগীর আত্মীয়দের বিশ্রামের জন্য ঘর তৈরির। রোগী কল্যাণ সমিতির অন্য সদস্যরা তাতে সম্মতি জানান। আগামী ছ’মাসের মধ্যে সুপা স্পেশালিটি হাসপাতালের কাজ শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘বর্তমানে মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলি রূপায়িত হলে অন্য চেহারায় পাওয়া যাবে হাসপাতালকে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘চিকিৎসক, নার্স, গ্রুপ ডি পদে যে ঘাটতি রয়েছে তা মেটাতে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি পাঠানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন