শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের খেয়াঘাটটি ইজারা দিয়ে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা পায় পুরসভা। চুক্তি অনুযায়ী ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই। ইজারাদারেরা ঘাট, বোট, জেটি, বার্জ দেখভাল করে। কিছু আলো ও ঘাটে যাওয়ার রাস্তা দেখভালের দায়িত্ব পুরসভার। তবে শনিবার রাতে নৌকাডুবির ঘটনার পরেই ঘাটের যথাযথ দেখভাল হচ্ছে না বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে পুরসভা। প্রশ্ন উঠছে, এ দিকে আগে নজর গেলে হয়তো এতগুলো প্রাণ যেত না।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে আগের বোর্ড তিন বছরের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দেয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। চুক্তি পত্রে ইজারাদার হিসাবে স্বাক্ষর রয়েছে কালনা শহরের ব্যবসায়ী রণজিৎ মোদকের। পুরসভার তরফে স্বাক্ষর করেছেন তৎকালীন পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। চুক্তি অনুযায়ী, ইজারা নেওয়া সংস্থার প্রতিবছর ৩২ লক্ষ ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা পুরসভাকে। আর্থিক চুক্তির সঙ্গে বেশ কিছু শর্তও থাকে পুরসভার।
বর্তমান পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ জানিয়েছেন, চুক্তিতে ছিল ইজারাদাররা ঘাটে সবসময় একটি স্পিড বোট রাখবে। যাতে নৌকাডুবির মতো ঘটনা ঘটলে উদ্ধার কাজ করা যায়। পাশাপাশি নদী ঘাটে যানবাহন পরিবহনের জন্য থাকবে বার্জ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাত্রী পরিবহণও হবে তাতে। দেবপ্রসাদবাবুর দাবি, ‘‘ওই চুক্তি মেনে শনিবার রাতে যদি বার্জ চালানো হতো তাহলে এত বড় বিপদের মুখে পড়তে হতো না।’’ চুক্তি মানা হচ্ছে কিনা তা আগের পুরবোর্ডের খতিয়ে দেখা উচিত ছিল বলেও তাঁর দাবি।
কিন্তু এ বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরেও তো বছর ঘুরেছে। এত দিনে ‘চুক্তিভঙ্গে’নজর গেল? দেবপ্রসাদবাবু জানান, পুরসভা নানা বিষয়ে অজস্র চুক্তি করে। সব সময় সবটা খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। কালনা খেয়াঘাটে নৌকাডুবির ঘটনার পরে চুক্তির ফাইলটি পরে দেখতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদার সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও তাঁর দাবি।
ইজারাদার সংস্থার তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, স্পিড বোট ঘাটেই ছিল। কিন্তু চালানোর লোক নেই। ফলে তা নামানো যায়নি। আর শনিবার রাতে বার্জে লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। আগের পুরপ্রধান বিশ্বজিৎবাবুও বলেন, ‘‘ইজারাদারেরা নিয়ম না মানলে বর্তমান বোর্ড আগেই চুক্তি বাতিল করে দিতে পারত।’’