নিঘায় কুকুর নিয়ে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে এক ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ মিলল জামুড়িয়ার নিঘায়। পাশেই অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। বুধবার সকালে এই ঘটনা জানাজানির পরে এলাকায় বিক্ষোভ-অবরোধ করেন এলাকাবাসী। পুলিশের তদন্তে অসুবিধে হচ্ছে, এ কথা বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
পুলিশ জানায়, মহম্মদ আবুল (৫৫) নামে ওই ব্যক্তির ডেকরেটর্সের ব্যবসা ছিল। তিনটি মালবাহী গাড়িও ভাড়ায় দিতেন তিনি। বাড়ি নিঘা নীচে সেন্টারে। তবে স্ত্রী সামিনাকে নিয়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এক কামরার একটি বাড়িতে থাকতেন আবুল। তাঁদের দুই ছেলে ও ভাইয়ের পরিবার পুরনো বাড়িতেই থাকে। জাতীয় সড়কের পাশের বাড়িটির লাগোয়া একটি চায়ের দোকান চালান আবুলের ভাই মহম্মদ ইকবাল।
ইকবাল জানান, দোকানের জিনিসপত্র তিনি রাতে দাদার ঘরের ভিতরে রেখে যান। এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ দোকান খুলতে এসে দেখেন তখনও দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় তিনি বাড়ির পিছনের দিকে গিয়ে দেখেন, দরজার কাছে সামিনা পড়ে রয়েছেন। ইকবাল বলেন, ‘‘সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফোন করে জানাই। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়।’’
পুলিশ জানায়, বাড়ির পিছনের দিকের গ্রিলের দরজা খোলা ছিল। সে দিক দিয়েই আততায়ী পালিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, পুরনো কোনও শত্রুতার জেরেই মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপে আবুলকে খুন করা হয়েছে। সামিনার মাথার পিছনে আঘাত করা হয়। তাঁরও মৃত্যু হয়েছে মনে করে হামলাকারী পালায় বলে ধারণা পুলিশের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে আসানসোল হাসপাতাল, পরে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিহতের বড় ছেলে মহম্মদ ইসরাফেল বলেন, “আমরা দোষীদের কড়া শাস্তি চাই।’’
ঘটনাস্থল থেকে কিলোমিটার খানেক দূরেই শ্রীপুর পুলিশ ফাঁড়ি। মাসখানেক আগেই ওই এলাকার অদূরে ইমলিধাওড়ায় ভোরে মাঠে শৌচকর্মে বেরিয়ে আক্রান্ত হন এক মহিলা। এ দিন খুনের ঘটনা জানাজানির পরেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির অভিযোগে শ্রীপুর মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষজন। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর ঊষা পাসোয়ানের অভিযোগ, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় পরপর অপরাধ ঘটছে। ইমলিধাওড়ায় আক্রান্ত মহিলা এখনও চিকিৎসাধীন। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ বার খুনের ঘটনায় আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
ঘণ্টাখানেক অবরোধের পরে মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ‘‘রাস্তা অবরোধ করে রাখা হলে পুলিশ দ্রুত কাজ করতে পারবে না। আমরা চাই, তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করা হোক।’’ এর পরেই অবরোধ ওঠে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা এবং এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জে মার্সি। এডিসিপি বলেন, ‘‘আক্রান্ত মহিলা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তিনি কিছুটা সুস্থ হলে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। সব দিক খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’