তারক জয়সওয়াল। নিজস্ব চিত্র
পরিবারের কর্তা ব্যাঙ্কে চাকরি করেন, ছেলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ে, এ সব দেখেশুনে বিশ্বাস করে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভাড়াটের বিরুদ্ধেই ব্যাঙ্কের টাকা লোপাট করে পালানোর অভিযোগ উঠেছে শুনে বিশ্বাস করতে পারছেন না বাড়ির মালিক শ্যামল পাল। তাঁর দাবি, ‘এ বার তো মানুষকে বিশ্বাস করাই দায়।’’
বৃহস্পতিবার মেমারি বাসস্ট্যাণ্ডের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ভল্ট থেকে ৮৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গায়েবের ঘটনা নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা ওই ব্যাঙ্কের সিনিয়র আসিস্ট্যান্ট তারক জয়সওয়াল। নতুনপল্লির একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়ির মালিক শ্যামলবাবু জানান, দিন দশেক হল তারকবাবু বাড়িতে আসেননি। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকেও দেখেননি তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগে এ বাড়িতে ভাড়া নেন তারকবাবু। এলাকায় খুব একটা মিশতেন না তাঁরা। এমনকি, বাড়িওয়ালার সঙ্গেও খুব একটা আলাপ ছিল না। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘এক এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল। পরিবার, চাকরি দেখে ভাড়া দিয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়া ছাড়া আর বিশেষ যোগাযোগ ছিল না।’’ কিন্তু ওই মানুষটার নামেই যে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তা মানতে পারছেন না তিনি। এক প্রতিবেশী সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে পাড়ার কালী পুজোয় নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলাম ওই বাড়িতে। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি, পুজোতেও আসেননি। তারপরে আমরা আর যোগাযোগ করিনি।’’
বছর দেড়েক আগে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের পিছনে কাছারি রোডের কাছে একটি বাড়িতে এক আত্মীয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতেন তারকবাবু। পরে নিজের অংশ বিক্রি করে দিয়ে নতুনপল্লির ভাড়াবাড়িতে চলে যান। ওই বাড়ির আত্মীয় মায়া জয়সওয়াল জানান, তারকবাবু মাঝেমধ্যে আসতেন। তবে কোনও দিন কিছু টের পাননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কের কিছু লোকজন আসায় তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন।
ব্যাঙ্কের আশপাশে অবশ্য তাঁকে সবাই মিশুকে বলেই জানত। ব্যাঙ্কের ধারেকাছের ব্যবসায়ীদেরও খুব কাছের লোক ছিলেন ‘জয়সওয়াল দা’। ব্যাঙ্কের পাশের এক জেরক্সের দোকানের মালিক অরূপ নাথ বলেন, ‘‘অনেক সময় জয়সওয়ালদাকে টাকা দিয়ে দিতাম। উনিই জমা করে দিতেন। ওই মানুষটা এত টাকা প্রতারণা করেছেন ভাবতে পারছি না।’’ ব্যাঙ্কের নীচে এটিএম-এর নিরাপত্তাকর্মী শেখ হীরু বলেন, ‘‘ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে অফিসে আসতেন মানুষটা। অনেকের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করে দিতেন। সবাই খুব ভালবাসত তাঁকে। বিশ্বাসী লোকটা এমন অবিশ্বাসের কাজ করছেন শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।’’