নেতাজির চিঠি, চেয়ার দেখতে আসেন পড়শিরাও

এই পরিবারের বাচ্চা, বুড়ো— সকলেই এই দিনে এক জায়গায় জড়ো হন। গদি দেওয়া দেওয়া ও তারের বুনোটের কাঠের চেয়ারে হাত বুলিয়ে নেতাজিকে অনুভব করার পাশাপাশি ভক্তি ভরে প্রণাম করেন তাঁর সই করা চিঠিকে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:৩০
Share:

(বাঁ দিকে) নেতাজির ব্যবহৃত চেয়ার। (ডান দিকে)তাঁর লেখা চিঠি

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনটি তাঁদের কাছে শুধুই একটি ছুটির দিন নয়। অন্য অনুভূতি নিয়ে বয়ে আনে কুলটির বেলরুই গ্রামের রায় পরিবারে।

Advertisement

এই পরিবারের বাচ্চা, বুড়ো— সকলেই এই দিনে এক জায়গায় জড়ো হন। গদি দেওয়া দেওয়া ও তারের বুনোটের কাঠের চেয়ারে হাত বুলিয়ে নেতাজিকে অনুভব করার পাশাপাশি ভক্তি ভরে প্রণাম করেন তাঁর সই করা চিঠিকে।

১৯৪০ সালের জুন মাসের কথা। রায় পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেল, বেলরুই গ্রামের জমিদার পরিবারের সদস্য তথা ব্রিটিশ সরকারের সান্মানিক ম্যাজিস্ট্রেট নকুলচন্দ্র রায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন নেতাজি। তাঁর আসার খবর অবশ্য আগেই পেয়েছিলেন নকুলবাবু। কিন্তু কেন? তা জানা ছিল না। গদি দেওয়া ও তারের বুনোটের একটি আবলুশ কাঠের চেয়ারে তাঁকে বসতে দেওয়া হল। তিনি বসলেন। নকুলবাবুর সঙ্গে দরকারি কথাও বললেন। তারপরে নিজের টানা হস্তাক্ষরে সই করা একটি চিঠি দিলেন তাঁকে। নেতাজির এলগিন রোডের বাড়ির ঠিকানা ছাপানো নিজের লেটার প্যাডে তিনি নকুলবাবুকে লিখেছেন, ‘সোনার বাংলা কটন মিল লিমিটেডের বোর্ড অব ডাইরেক্টরের চেয়ারম্যান পদে তিনি যোগ দিয়েছেন। পি আর দাসও যোগ দিয়েছেন। মিলের উৎপাদিত পণ্য শীঘ্রই বাজারে আসবে। তাঁর অনুরোধ নকুলবাবুও বোর্ডে যোগ দিন। ২০ জুন বোর্ডের সাধারণ সভার আগেই তিনি যেন পদক্ষেপ নেন।’ রায় পরিবার সুত্রে জানা গিয়েছে নেতাজির ওই অনুরোধ রেখেছিলেন নকুলবাবু।

Advertisement

নেতাজির ওই চিঠি ও তাঁর ব্যবহার করা চেয়ারটি আজও নিজের কাছে পরম যত্নে সংরক্ষিত রেখেছেন নকুলবাবুর নাতি বাবর রায়। বাবরবাবু জানিয়েছেন, তাঁর বাবা অনাদিনাথ রায় ছিলেন নকুলবাবুর ভাইপো। নেতাজির চিঠি ও তাঁর ব্যবহার করা চেয়ারটি নকুলবাবুর কাছ থেকে সংগ্রহ করে অনাদিবাবু আমৃত্যু নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে সেগুলি এখনও পরম যত্নে নিজের কাছে লালন করছেন বাবরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এই দু’টি আমাদের কাছে অমুল্য সম্পদ। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন। নেতাজির জন্মদিনে এগুলি ছুঁয়ে দেখতে হাজির হন প্রতিবেশীরাও।’’

রায় পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা সাবেক কুলটি পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান বাচ্চু রায় জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা অতীতে এই তল্লাটের জমিদার ছিলেন। সেই সুবাদে পরাধীন দেশের বহু বিশিষ্ট মানুষজন তাঁদের বাড়িতে এসেছেন। কিন্তু নেতাজির ওই চিঠি ও তাঁর ব্যবহার করা চেয়ারের আলাদা মাত্রা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সকলের দেখার জন্য দিন দুই আগে থেকেই আমরা এগুলি বৈঠকখানা ঘরে সাজিয়ে রাখি।’’

এ সব নিয়ে উদ্দীপনা রয়েছে পরিবারের এই প্রজন্মেরও। এমবিএ পাঠরতা ডালিম রায় বা উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র রোনাল্ডো রায় বলেন, ‘‘এগুলি ছুঁয়ে দেখে আমরা শিউরে উঠি। অন্যরকম অনুভূতি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন