অনেকেই আছেন যাঁরা বাইরে থেকে শহরে এসে ট্র্যাফিক সমস্যায় পড়েন। কোথাও আবার মোটরবাইক আরোহীদের দৌরাত্ম্যে পথ চলাই দায় হয়ে পড়ে। অনেক সময়ে দেখা যায়, ফাঁকা জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পথের যাবতীয় বিপত্তির সামাল দিতে এ বার ট্র্যাফিক সংক্রান্ত বিষয়ে ‘হোয়াট্স অ্যাপ’ নম্বর চালু করতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ‘৯০৭৩৬৭৬২৩৬’, এই নম্বরে ছবি তুলে পাঠালে বা মেসেজ করলেই জেলা পুলিশ সমস্যা সমাধানে পৌঁছে যাবে। পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের নজরদারিতে হোয়াট্স অ্যাপ অ্যাকাউন্টটি চলবে বলে জানা গিয়েছে। কুণালবাবু বলেন, ‘‘জেলায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চলছে। এর জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। দুর্ঘটনা আরও কমাতেই এই উদ্যোগ।’’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-য় ৮২৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল, মারা গিয়েছিলেন ৪৯০ জন। গত বছরে ওই দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭১৩টিতে। ২০১৬-র তুলনায় দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যুও কমেছে ৭৯টি।
পুলিশ জানায়, পথ-নিরাপত্তায় ইতিমধ্যেই রাস্তায় ‘স্পিড গান’ বসানো হয়েছে। জাতীয় সড়কে ওয়াচ টাওয়ারও বসেছে। হাইওয়েতে চলছে নজরদারি গাড়ি। এ ছাড়াও দূরপাল্লার পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের নজরদারিতে রাখার জন্য জাতীয় বা রাজ্য সড়কের ধারে থাকা থানাগুলি গাড়ি আটকে চালকদের চোখেমুখে জল দেওয়া ও চায়ের ব্যবস্থা করেছে। রাস্তার নানা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। তবে হেলমেট না পরলে তেল না দেওয়ার নির্দেশিকা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না বলে পুলিশ জানায়। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, সারা বছরে যত দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৮-১০ শতাংশ দুর্ঘটনা পেট্রল পাম্প চত্বরে ঘটে। এর জন্য সোমবার জাতীয় সড়কের ধারে থাকা পেট্রল পাম্পের ৪৫ জন মালিককে নিয়ে আলোচনায় বসেন পুলিশ সুপার। ওই বৈঠকে পুলিশ সুপার জানান, তিন ধাপে পেট্রল পাম্পের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে জাতীয় সড়কের ধারে থাকা পেট্রল পাম্পের সঙ্গে, দ্বিতীয় ধাপে এসটিকেকে ও রাজ্য সড়কের ধারে থাকা পেট্রল পাম্প ও তৃতীয় ধাপে বাকিদের বৈঠক করে নির্দেশিকা দেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে মূলত চারটি নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে। কী তা? প্রথমত, পাম্পের সামনে ১০০ মিটার সব সময়ে ফাঁকা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাম্পে ঢোকা ও বেরনোর মুখে বড় আয়না রাখতে হবে, যাতে চালকরা পিছনের গাড়িগুলিকে ভাল ভাবে দেখতে পান। তৃতীয়ত, ‘স্পিড ব্রেকার’ রাখতে হবে, যাতে দ্রুততার সঙ্গে গাড়িগুলি বেরোতে বা ঢুকতে না পারে। চতুর্থত, সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা দরকার। পুলিশ সুপার বলেন, “রাজ্য সরকারের ওই সব নির্দেশিকা না মানলে পাম্পের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিলের সুপারিশ করতে পারি।” বৈঠক চলাকালীন মালিকদের একাংশ অবশ্য অভিযোগ করেন, অনেক সময়েই স্থানীয়দের হুজ্জুতির ভয়ে তারা মাথায় হেলমেট না থাকা মোটরবাইক আরোহীদেরও তেল দিতে বাধ্য হন। অভিযোগ শুনে পুলিশ সুপার বলেন, “মোটরবাইকের নম্বর-সহ ছবি তুলে হোয়াট্স অ্যাপে পাঠিয়ে দিন। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”