প্রতিশ্রুতি সার, যাতায়াত আলপথে

মাঠের আল পথ ধরে, খাল-বিল ডিঙিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামে। ভোট এলেই গ্রামে আসেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিও মেলে ঢের। ফের এসেছে ভোট। গ্রামে বেড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আনাগোনা। কিন্তু আউশগ্রামের দেবশালা পঞ্চায়েতের আমানিডাঙার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, ভোট তো মিটে যাবে, রাস্তাটা মিলবে কবে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বুদবুদ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

মাঠের আল পথ ধরে, খাল-বিল ডিঙিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামে। ভোট এলেই গ্রামে আসেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিও মেলে ঢের। ফের এসেছে ভোট। গ্রামে বেড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আনাগোনা। কিন্তু আউশগ্রামের দেবশালা পঞ্চায়েতের আমানিডাঙার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, ভোট তো মিটে যাবে, রাস্তাটা মিলবে কবে?

Advertisement

প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রামের আমানিডাঙায় কুনুর নদীর পাড়ে প্রায় ২৫টি অদিবাসী পরিবার বাস করেন। রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ বিভিন্ন সরকারি নথি রয়েছে বাসিন্দাদের। রয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও। কিন্তু গ্রামে ঢুকতে গেলে এ যাবৎ কোনও পাকা রাস্তা তৈরি হয়নি বলে জানান বাসিন্দারা। এই এলাকায় ঢোকা যায় দু’দিক থেকে। এক দিকে বুদবুদের কাঁকড়া গ্রামের পিছন দিক দিয়ে খেতের আল পথ ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার গেলে আমানিডাঙা। এই পথের মাঝখানে রয়েছে কুনুর নদী ও ডুলে খাল। কাঁকসার পিয়ারীগঞ্জ হয়েও আমানিডাঙায় যাওয়া যায়।

পাকা রাস্তা না থাকায় অধিকাংশ সময়েই ভরসা করতে হয় গরুর গাড়ির উপর। কিন্তু বর্ষা এলে সে পথেও বাধা। আমানিডাঙার বাসিন্দা গোঁসাই মুর্মু, সনাতন সোরেনরা জানান, বর্ষায় খেতে ফসল থাকে। ফলে গরুর গাড়ি করে যাওয়া যায় না। আবার কুনুর নদীতে জল বেড়ে গেলে পায়ে হেঁটেও চালচল করা দায় হয়ে পড়ে। রাত বিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার উজিয়ে ভাতকুণ্ডা বা কাঁকসায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া রীতিমতো সমস্যার হয়ে পড়ে বলে জানান বাসিন্দারা। অনেক সময় রোগী বা গর্ভবতী মহিলাদের খাটে চাপিয়েও নিয়ে যেতে হয় বলে জানান সনাতনবাবু। গ্রামের বধূ লক্ষ্মী সোরেনের দাবি, ‘‘বাইরের থেকে এক বার কেউ গ্রামে এলে আর কেউ এ মুখো হতে চান না।’’ যোগাযোগের সমস্যার কারণে পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আত্মীয়েরা আসতে ভয় পান বলে জানান লক্ষ্মীদেবী।

Advertisement

দশকের পর দশক যায়। যাত্রা-পথের দুর্ভোগটা অবশ্য বদলায়নি। সেই কবে থেকে ভোটের মুখে গ্রামে আসেন প্রার্থীরাও— ভোট চাইতে। কিন্তু ভোট মিটলেই যে কে সেই। আমানিডাঙার বাসিন্দা ৭৫ বছরের সোম সোরেন বাড়ির দাওয়ায় বসে জানান, তাঁর বাবারও জন্ম এখানে। তাঁর বড় হওয়াটাও এই এলাকাতেই। গ্রামের আল পথের দিকে তাকিয়ে সোমবাবু বলেন, ‘‘চারপাশটা বদলে গেল। কিন্তু আমানিডাঙায় আসতে গেলে এখনও সেই গরুর গাড়িই ভরসা।’’ আমানিডাঙার বাসিন্দারা ভোট দিতে যান কাঁকড়া গ্রামে। এর আগে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূল প্রার্থীর কাছে এলাকায় রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। এই এলাকাটি আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক সিপিএমের বাসুদেব মেটের দাবি, ‘‘ওখানে রাস্তা তৈরির জন্য কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। উপযুক্ত জায়গা না থাকায় তা করা যায়নি।’’ এ বারের তৃণমূল প্রার্থী অভেদানন্দ থান্ডার বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। তবে বিষয়টি মাথায় রাখছি।’’

এলাকারই এক যুবক প্রশাসনিক কাজকর্ম সারতে কাঁকসায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ফুল প্যান্টটা খানিক গুটিয়ে নিলেন। সামনেই যে জল ডিঙতে হবে এ বার। মধ্য ত্রিশের যুবকটির ক্ষোভ, ‘‘এ বারও ভোট মিটে যাবে। কিন্তু গ্রামের রাস্তাটা মিলবে কবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন