শহরে ঘুড়ির মেলা এ বার ভোকাট্টা

 ছাদে-ছাদে লাটাই হাতে ভিড়, আকাশে ঘুড়ি কাটলেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, কেটে যাওয়া ঘুড়ির পিছনে দল বেঁধে দৌড়। বর্ধমান শহরে ঘুড়ির মেলার সময়ে এটাই চেনা ছবি। কিন্তু এ বার সেই ছবি কিছুটা আলাদা। রবিবার শহরের আকাশে দেখা গেল না হরেক রঙের ঘুড়ির মেলা।

Advertisement

সুপ্রকাশ চৌধুরী

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৭
Share:

ঘুড়ির দোকানে কচিকাঁচার দল। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র

ছাদে-ছাদে লাটাই হাতে ভিড়, আকাশে ঘুড়ি কাটলেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, কেটে যাওয়া ঘুড়ির পিছনে দল বেঁধে দৌড়। বর্ধমান শহরে ঘুড়ির মেলার সময়ে এটাই চেনা ছবি। কিন্তু এ বার সেই ছবি কিছুটা আলাদা। রবিবার শহরের আকাশে দেখা গেল না হরেক রঙের ঘুড়ির মেলা। বরং, মকর সংক্রান্তির ছুটিতে মেলা-পিকনিকেই ভিড় জমালেন শহরবাসী।

Advertisement

বর্ধমানে মকর সংক্রান্তির দিন ঘুড়ির মেলার রেওয়াজ সেই রাজার আমল থেকে। বিশ্বকর্মা পুজো নয়, এই সময়েই ঘুড়ি ওড়ানোর চল শহরে। আগে থেকে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ির মেলা। চলে মকর পরবের পরেও। কিন্তু এ বার ঘুড়ি বা মাঞ্জা সে ভাবে বিক্রি হয়নি, জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। লাটাই হাতে আকাশ দখলের সেই ছবিটাও তাই উধাও।

কেন এই পরিস্থিতি? শহরের পার্কাস রোড এলাকার ঘুড়ি ব্যাবসায়ী নাজির হোসেনের দাবি, ‘‘জিএসটি-র প্রভাবে কাগজ, পাটকাঠির মতো ঘুড়ি তৈরির নানা কাঁচামালের দাম বেড়েছে। জোগানেও ঘাটতি আছে। ফলে, ঘুড়ির দাম বেশি। তাই হয়তো খরিদ্দার কম হচ্ছে।’’ তিনি জানান, আগের তুলনায় বড় ঘুড়ির প্রায় ১০ টাকা, ছোট বা পলিথিনের ঘুড়ির ২-৩ টাকা করে দাম বেড়েছে।

Advertisement

ঘুড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বড়বাজার এলাকার ঘুড়ি প্রস্তুতকারক তথা ব্যবসায়ী শেখ রাজার আবার বক্তব্য, ‘‘স্কুলে-স্কুলে ভর্তি চলছে। তার উপরে এখন মোবাইল-কম্পিউটারের রমরমা। তাই ছেলেরা ঘুড়ি-লাটাইয়ের পিছনে ছুটছে না।’’ গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার ৬০ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলেও তাঁর দাবি।

ঘুড়ি না উড়লেও ছুটির দিনে অবশ্য উৎসবের মেজাজে শহরবাসী। মাঘী মেলায় সকাল থেকে ভিড় দামোদরের সদরঘাটের। মেলা অবশ্য শুরু সোমবার থেকে। তবে এক দিন আগে থেকেই বিকিকিনি শুরু হয়ে গিয়েছে দামোদরের চরে। চলছে পিকনিকও। শহরের তেলিপুকুর থেকে পিকনিক করতে আসা প্রণব হাজরা বলেন, ‘‘ছুটির দিনে বাড়ির সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছি।’’ বাঁকুড়া মোড় থেকে বাবার সঙ্গে মেলায় আসা চতুর্থ শ্রেণির সম্বিত রায় জানায়, বিকেলে টিউশন আছে, তাই সকালেই ঘুরে যাচ্ছে সে। কেনা হয়নি ঘুড়ি-লাটাইও।

ইদিলপুরেও জমজমাট মেলা বসেছে। বেতের ঝুড়ি থেকে জিলিপি বিকোচ্ছে দেদার। হলদি-সহ বর্ধমান শহরের অন্য নানা পিকনিকের জায়গাতেও এ দিন বেশ ভিড় জমে। দুপুরের পরে শহরের নতুনগঞ্জ, ভাতছালা, বিসি রোড-সহ কিছু এলাকায় ঘুড়ি উড়তে দেখা গেলেও অন্য বছরের ছবি ফেরাতে পারেনি।

শহরে এ বার ঘুড়িই ভোকাট্টা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন