ভোটের আগে ক্ষোভ নয়, গুসকরায় পরামর্শ অনুব্রতর

বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরপ্রধানকে অপসারণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য দলের কাউন্সিলরদের পরামর্শ দিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি তথা বর্ধমানের আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

জেলাশাসকের দফতরে গুসকরার কাউন্সিলরেরা। নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরপ্রধানকে অপসারণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য দলের কাউন্সিলরদের পরামর্শ দিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি তথা বর্ধমানের আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার বিকেলে গুসকরায় দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে এক বৈঠকে পুর এলাকায় নির্বাচনী কৌশলও ঠিক করে দেন অনুব্রতবাবু। তবে পর্যবেক্ষকের পরামর্শ কাউন্সিলররা শুনবেন কিনা তা নিয়ে দলের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরে গুসকরার পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের সঙ্গে দলের বড় সংখ্যক কাউন্সিলরদের বিরোধ চলছে। কয়েক সপ্তাহ আগে, পুরপ্রধানের অনুগামী মল্লিকা চোঙদারের সঙ্গে পুরসভার একটি বৈঠকে রীতিমতো চুলোচুলি, মারামারি বেধে যায়। প্রকাশ্যে কাউন্সিলরদের মারামারি দেখে তাতে জড়িয়ে পড়েন মল্লিকাদেবীর স্বামী সোমনাথবাবুও। লোকলস্কর নিয়ে নিত্যানন্দবাবু ও তাঁর গোষ্ঠীর কয়েকজনকে তিনি মারধর করেন বলেও অভিযোগ। পরে দু’পক্ষই আউশগ্রাম থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ঘটনার জেরে তৃণমূলের শহর সভাপতি ও কাউন্সিলর চঞ্চল গড়াই-সহ ৮ কাউন্সিলর কার্যত ‘বয়কট’ করে দেন পুরপ্রধানকে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উপপুরপ্রধান-সহ ৬ জন কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তলবি সভা ডাকার জন্য জেলাশাসক ও মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর)কে চিঠি দেন। গত ১ মার্চ তার মধ্যে দু’জন আবার তাঁর উপর ‘আস্থা’ রয়েছে দাবি করে তলবি সভা ডাকার কোনও প্রয়োজন নেই বলে পুরপ্রধানকে চিঠি দেন। এর মধ্যেই গত শনিবার দলের পর্যবেক্ষক গুসকরার সব কাউন্সিলরকে বোলপুরে দলীয় দফতরে ডেকে পাটান। কিন্তু সেখানে অধিকাংশ কাউন্সিলর উপস্থিত না থাকায় সেই বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হয়। তারপরেই মঙ্গলবার বিকেলে গুসকরায় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান। এর মধ্যেই পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় পর্যবেক্ষককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলের কয়েকজন কাউন্সিলর নীতি বহির্ভূত দাবি করছেন। সেই দাবি তিনি না মানায় তাঁকে সরানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে। এর ফলে পুরসভার স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

তার আগেই এ দিন সকালে পুরপ্রধানকে সরানোর জন্য তৃণমূলের ৮ কাউন্সিলর (পুরপ্রধানের উপর আস্থা রয়েছে বলে যে দু’জন চিঠি দিয়েছিলেন, তাঁদেরও সই রয়েছে) আগামী শুক্রবার বিশেষ তলবি সভা ডেকেছেন। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক ও মহকুমাশাসককে। ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে তলবি সভা ডাকার জন্য বলা হয়েছিল। পুর-আইন মেনে তিনি ৭ মার্চের মধ্যে তলবি সভা না ডাকায় তাঁরা শুক্রবার বেলা ১টার সময় ওই তলবি সভা ডেকেছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন বিকেলে কাউন্সিলরদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার সময় পর্যবেক্ষক জানান, দলনেত্রী গুসকরা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরপ্রধানকে অপসারণ বিষয়ে কোনও আলোচনা করা যাবে না। বিধানসভা নির্বাচনের পর পুরপ্রধানকে দলীয় কাউন্সিলররা না চাইলে তিনি পদত্যাগ করবেন নয়তো অপসারণ করা হবে। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছে, ওই সব ওয়ার্ড পিছু তিনশো ভোটে প্রার্থীকে জেতাতে হবে। বাকি পাঁচটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব শহর সভাপতির উপর দিয়েছেন পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। তিনি অবশ্য বলেন, “পুরসভা নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে।” পুরপ্রধান সহ কোনও কাউন্সিলরই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি এ নিয়ে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন