শ্রমিকদের ন্যূনতম ভাতা ১৮ হাজার টাকা করা-সহ মোট ১২ দফা দাবিতে শুক্রবার ধর্মঘট ডেকেছিল দেশের ১০টি শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু যাদের জন্য ধর্মঘট, সেই শ্রমিকদের উপস্থিতির হার বেশির ভাগ কারখানা ও খনিতেই মোটের উপরে স্বাভাবিক ছিল বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল।
কারখানা
বার্নপুরের ইস্কো কারখানায় দিনভর কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় কারখানার প্রতিটি গেটে পুলিশ ও সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন করা হয়। সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানান, অন্যান্য দিনের মতোই উৎপাদন ও উপস্থিতির হার স্বাভাবিক ছিল। চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানাতেও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ।
শুক্রবার সকালে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) গেটের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে বেশ কয়েক জন জড়ো হন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়েই বেশির ভাগ কর্মী কাজে যোগ দেন বলে কারখানা সূত্রের খবর। একই ছবি দেখা গিয়েছে দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টেও (এএসপি)। তবে এ দিন সকালে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার বটলিং প্ল্যান্টে লোডিং-আনলোডিং বিভাগে হাজিরার হার ছিল মাত্র ৪০ শতাংশের মতো। হ্যান্ডলিং প্ল্যান্টে হাজিরার ছিল আরও কম, মোটে ১৫ শতাংশ।
খনি-এলাকা
শিল্পাঞ্চলে ইসিএলের সমস্ত খনিতেই উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলে সংস্থার দাবি। তবে এ দিন সকালে ইসিএলের পাটমোহনা খনিতে ধর্মঘটের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সামান্য বচসা বাধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতির সামাল দেয়। হাতে গোনা কয়েকটি খনি ছাড়া কোথাও ধর্মঘটের সমর্থকদের পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কোনও খনিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। গড় উপস্থিতির হার ৮৭ শতাংশ।’’ ইসিএলের ঠিকা দেওয়া খনিগুলিতেও উৎপাদনের হার স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি। তবে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ও মুগমা খনিতে উৎপাদন খানিক ব্যহত হয়েছে।
বিপত্তি এড়াতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ও খনিগুলির বহু কর্মী কর্মস্থলে চলে আসেন বলে জানা গিয়েছে।
শিল্পতালুক
সপ্তাহখানেক আগে দুর্গাপুরের বামুনাড়া শিল্পতালুকের তিনটি বেসরকারি অনুসারি ইস্পাত কারখানা উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা করে। এর জেরে পুজোর আগে কাজ হারান প্রায় পাঁচশো ঠিকাকর্মী। তবে সেই ঘটনার প্রভাব শিল্পাঞ্চলের শিল্পতালুকগুলিতে তেমন পড়েনি বলেই দেখা গেল। দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি শিল্প কারখানাতেই অর্ধেকের বেশি শ্রমিক-কর্মীই হাজির ছিলেন। আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কল্যাণেশ্বরী শিল্পতালুকেও স্বাভবিক উৎপাদন হয়েছে বলে মালিক পক্ষের দাবি।
যদিও ধর্মঘটকে ‘সর্বাত্মক’ বলে দাবি করেছেন শ্রমিক নেতৃত্ব। সিটুর জেলা কার্যকরী কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘শ্রমিক-কর্মীরা নিজেদের স্বার্থেই এ দিনের ধর্মঘটে বিপুল সাড়া দিয়েছেন।’’