পোলিও-ছুটদের দোরে ছুটে টিকা দিলেন কর্তারা

বাড়িতে সকাল সকাল ‘টিকা দিদিমণি’দের ঢুকতে দেখেই হন্তদন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন বছর ষাঠেকের প্রৌঢ়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মুখের উপরে সপাটে জানিয়ে দিলেন, দু’চারবার পোলিও টিকা খেয়েই ছেলের পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

চলছে পোলিও খাওয়ানো। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে সকাল সকাল ‘টিকা দিদিমণি’দের ঢুকতে দেখেই হন্তদন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন বছর ষাঠেকের প্রৌঢ়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মুখের উপরে সপাটে জানিয়ে দিলেন, দু’চারবার পোলিও টিকা খেয়েই ছেলের পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছে! কাটোয়ার মাঠপাড়ায় পোলিও না খাওয়া শিশুদের টিকা খাওয়াতে গিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ প্রশাসনের কর্তাদের এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল। কেউ তাড়িয়ে দিলেন, আবার কেউ বাড়ি থেকে শিশুদের বেরই করলেন না!

Advertisement

গত রবিবার পোলিও খাওয়ানোর দিন ছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন কাটোয়ার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া রেলপাড় এলাকায় ১২০ জন শিশুকে পোলিও খাওয়ানো হয়নি। বৃহস্পতিবার মাঠপাড়ার অলিগলিতে ঘুরে তার মধ্যে জনা পঁয়ত্রিশেক শিশুকে বিস্তর কসরত করে পোলিও খাওয়ালেন মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও পুরপ্রধান। আমির হামজা নামে বছর এগারোর প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা আব্দুর গফফর শেখ অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানান, পোলিও টিকা খেয়েই ছেলে পা নাড়াতে পারে না! আবার পুরপ্রধানকে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নাসিমা খাতুন, কাদের শেখ, হাসান শেখদের বলতে শোনা যায়, ‘‘পুরসভা থেকে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়নি। এখন পোলিও খাওয়াতে এসেছে!’’ রমিলা খাতুন, মাসুম বিবিদের আবার অজুহাত, ‘‘ছেলের ঠান্ডা লেগেছে। ওকে টিকা খাওয়ানো যাবে না।’’

সচেতনতার এমন হাল দেখে কখনও গায়ে হাত বুলিয়ে, কখনও স্থানীয় ইমামদের মারফত বুঝিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা টিকা খাওয়াতে রাজি করান। অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা কবিতা শাসমল জানান, পোলিও হঠাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প সফল করতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। সমস্ত ধরনের টিকাকরণের বিষয়ে সচেতন করতে এপ্রিল থেকে চার মাস ব্যাপী ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ প্রকল্প চালু হবে। ‘‘এই সপ্তাহেই বাকি শিশুদের খুঁজে পোলিও খাওয়াবেন আশাকর্মীরা’’, — বলছেন তিনি।

Advertisement

পুরপ্রধান অমর রাম অবশ্য জানান, দু’তিন মাস অন্তর ওই এলাকায় পোলিও সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হয়। যদিও এলাকাবাসীর একাংশ তেমনটা মানতে চাননি। এ দিনের ঘটনা দেখে মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির পরামর্শ, ‘‘শুধুই প্রচার নয়, ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমেও সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন