নিজের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রায় ১০০ লোককে খাইয়েছেন শান্তি দাস। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘আমার শ্রাদ্ধ। খেতে আসবে তোমরা। নিমন্ত্রণ করে গেলাম। এসো কিন্তু...।’’
নিমন্ত্রণ পেয়ে অবাক হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। খানিক কৌতূহলের বশেই প্রাক্তন সেনাকর্মী শান্তি দাসের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ১১০০ গ্রামবাসী। পাত পেড়ে তাঁদের সকলকে খাইয়ে নিজের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলেন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার দাসপাড়ার ওই ঘটনায় শোরগোল এলাকায়। নিজের শ্রাদ্ধশান্তি সম্পন্ন করে শান্তি জানালেন, সন্তানদের উপর ‘ভার’ দিতে চান না। তাই নিজের শ্রাদ্ধ নিজেই করে নিলেন।
শান্তির স্ত্রী গত হয়েছেন আগেই। এক ছেলে এবং এক মেয়ের সঙ্গে এই বয়সে এসে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে প্রাক্তন সেনানীর। তাঁর দাবি, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আর মানসিক শান্তির খোঁজে গত বুধবার নিজের শ্রাদ্ধের আয়োজন নিজেই করেছেন। জীবিত মানুষের শ্রাদ্ধে খেতে হাজির হয়েছিলেন হাজার গ্রামবাসী। তাঁরা বিস্মিত, হতবাক। তবে শান্তিকে কিছু বলতেও পারেননি। অন্য দিকে, বৃদ্ধের দুই সন্তান বাবার এই ‘উদ্যোগ’ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁরা ছিলেন নির্বাক দর্শকের ভূমিকায়।
৭৮ বছরের বৃদ্ধ জানাচ্ছেন, অনেক দিন ধরে ভাবনাচিন্তা করছিলেন। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে জীবদ্দশায় নিজের শ্রাদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামবাসীদের জন্য মৎস্যভোজ থেকে কীর্তন, সমস্তটাই নিজে আয়োজন করেছেন। শান্তির কথায়, “জীবনে যা কিছু করার, নিজের হাতেই করে যেতে চাই। মৃত্যুর পর কে কী করবে, তা ভেবে লাভ নেই।’’ সন্তানদের উপরে কি ক্ষোভ বা খারাপ লাগা আছে? সরাসরি জবাব না দিয়ে প্রাক্তন সেনাকর্মী বলেন, ‘‘মনকে শান্ত করতে এমন আয়োজন করেছি।”
শ্রাদ্ধের যা যা উপচার, নিয়ম ইত্যাদি আছে, সবই মানা হয়েছে। আর যাঁর শ্রাদ্ধ, তিনি নিজেই অতিথিদের মাঝে বসে সমস্ত আয়োজনের তদারকি করেছেন। এমনই এক নিমন্ত্রিতের কথায়, ‘‘প্রথমে আমার মতো অনেকেই বিশ্বাসই করতে পারেননি। পরে শান্তিবাবুর বাড়িতে এসে দেখলাম এই কাণ্ড। রান্না কেমন হয়েছে, সেটাও জনে জনে জিজ্ঞাসা করেছেন উনি।’’ শান্তির শ্রাদ্ধে খেয়ে উল্টো কথাও বলছেন অনেকে। কেউ বলছেন সাহসী কাজ। ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং আত্মনির্ভরতার উদাহরণ। কেউ বলছেন, বাড়াবাড়ি। জীবনসায়াহ্নে শান্তি কোনও কিছু নিয়ে ভাবিত নন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা করার এখনই করো, বেঁচে থাকতে থাকতে করো। পরে বলে কিছু হয় না।’’