শাস্তি ‘মাথা পেতে নিয়ে’ বাড়ির পথে ‘রোমিও’। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল শুরুর সময়েও গেটের সামনে তাঁরা। স্কুল ছুটির সময় ঠিক গেটের বাইরে জটলা করতেন। কাজ— ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা। এ নিয়ে বেশ কয়েক বার গন্ডগোল হয়েছে। অভিযুক্তদের সাবধান করেছেন অভিভাবক থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লাভ হয়নি। শেষমেশ ‘শাস্তি’র পথে গেলেন অভিভাবক তথা গ্রামবাসীরা। ‘রোমিও’দের ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হল স্থানীয় ক্ষৌরকারের কাছে। সেখানে তাঁদের মাথা মুড়িয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। ‘ছাড়া’ পেয়েই বাইক ছুটিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন ২০ ‘রোডসাইড রোমিও।’ ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়।
বেলডাঙা থানার কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্রীদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, স্কুলে যাতায়াতের পথে কয়েক জন যুবক তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। উড়ে আসে টিপ্পনী। কখনও সেগুলো শালীনতার মাত্রা ছাড়ায়। প্রতিবাদ করলে আসে হুমকি। অভিভাবকেরা পদক্ষেপের চেষ্টা করেছেন। কাজ হয়নি। শেষমেশ ‘অভিনব পদক্ষেপ’ করলেন তাঁরা। ‘রোমিও’দের উৎপাত বন্ধ করতে তাঁদের ‘পাকড়াও’ করা হল স্কুলগেটের সামনে থেকে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি সেলুনে। মাথা ন্যাড়া করে দেন ক্ষৌরকার। তার পর আর কোনও কথা নেই। সেলুন থেকে বেরিয়েই সুড়সুড় করে বাড়ির পথ ধরেন ‘সাহসি’রা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বাইক চালানোর সময় তাঁরা কেউই হেলমেট পরতেন না। পাছে চুলের ছাঁট নষ্ট হয়। তবে শাস্তির ক্ষুর মাথায় পড়ার পরে ন্যাড়া মাথায় বাইক ছুটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ জন।
বেলডাঙার ওই স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। জেলার নাম করা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিভিন্ন গ্রামের কিছু যুবক বাইক নিয়ে নিয়মিত ইতস্তত ভাবে ঘোরাফেরা করতেন বলে অভিযোগ। তাঁরা ছাত্রীদের সঙ্গে রাস্তায় খারাপ আচরণ করতেন। বাইক থেকে ছাত্রীদের হাত টেনে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, বলেকয়েও লাভ হয়নি। অভিযুক্তদের আচরণ এতটাই ‘উগ্র’ যে প্রতিবাদীরাও ভয়ে পিছিয়ে এসেছেন। এলাকায় পুলিশের টহলদারি শিথিল হলেই এঁদের উৎপাত মাত্রা ছাড়়িয়ে যায়। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে এঁদের সবক শেখানোর জন্য বৈঠক করেন। তার পরেই ওই ঘটনা।
ওই ঘটনার বেলডাঙার তৃণমূল বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখের কানে গিয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রত্যেক অভিভাবকেরই উচিত তাঁর বাড়ির ছেলে সকাল থেকে সন্ধ্যে কী করছে, সেদিকে নজর রাখা। তবেই সামাজিক পরিবেশ সুস্থ থাকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার নজরেও এসেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে যেখানে মেয়েরা পড়াশোনা করে, তার সামনে প্রচুর যুবক সকাল-বিকেলে আড্ডা মারে। তারা খারাপ কিছু করলে প্রশাসনের তরফে নিয়মিত পদক্ষেপ করা হয়।’’ কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মহম্মদ মুস্তফা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে কিছু যুবক স্কুল শুরু এবং ছুটির মেয়েদের লক্ষ্য করে খারাপ মন্তব্য করতেন। ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘তার পরেও কিছু যুবক নিজেদের না শোধরানোয় এলাকাবাসীরা মিলে তাঁদের মাথা ন্যাড়া করে শাস্তি দিয়েছেন।’’