Purulia Land Dispute Case

মরেও শান্তি নেই! জমির মামলায় আদালতের নির্দেশে মৃত্যুর ৩৪ দিন পর কবর থেকে দেহ তুলে সরানো হল

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শনিবার বিশেষ আধিকারিকের নজরদারিতে এবং পুলিশের উপস্থিতি ওই দেহ কবর থেকে তুলে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। শববাহী যানে করে অন্য একটি জায়গায় কবর দেওয়ার কাজও সমাপ্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৬
Share:

কবর থেকে তোলা হচ্ছে দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ দিন আগে। রীতি মেনে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কবরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল বিতর্কিত জমি। তার পরেই জমির মালিকানা নিয়ে তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক। শেষমেশ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে দেহ তুলে সরাতে হল অন্যত্র। ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া-১ ব্লকের চকদা এলাকায়।

Advertisement

চকদা এলাকায় একটি আশ্রম রয়েছে। ওই আশ্রম লাগোয়া একটি জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আশ্রম কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় লোকজনের বিবাদ চলছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, ওই জমিটি আসলে কবরস্থান। আশ্রম কর্তৃপক্ষর দাবি, জমিটি তাঁদের মালিকানাধীন। এত দিন ধরে গ্রামবাসীরা ব্যবহার করছিলেন। এরই মাঝে গত ১২ অক্টোবর সমীরন আনসারি নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। পরিবার এবং গ্রামবাসীরা বিতর্কিত ওই জমিতেই তাঁর দেহ কবরস্থ করেন। এই প্রেক্ষিতে পুলিশের দ্বারস্থ হন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে মামলা গড়ায় উচ্চ আদালতে।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শনিবার বিশেষ আধিকারিকের নজরদারিতে এবং পুলিশের উপস্থিতি ওই দেহ কবর থেকে তুলে অন্যত্র সরানো হয়। শববাহী যানে করে অন্য একটি জায়গায় কবরও দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা আদালতের আইনজীবী শুভজিৎ সরকার বলেন, ‘‘আশ্রমের পাশেই মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ বসবাস করেন। আগে গ্রামবাসীরা কবরস্থান করার জন্য আশ্রমের কাছে জমি চেয়েছিলেন। তা নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। আদালত রায়ে জানিয়ে দেয় জমিটি আশ্রমের। কিন্তু তার পরেও গত মাসে আশ্রমের জায়গায় মুসলিম সম্প্রদায়ের এক জনের দেহ কবরস্থ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। তাই হাই কোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছিল।’’ আইনজীবী আরও জানান, আদালত দেহ স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।

Advertisement

অন্য দিকে, মৃতার পরিবারের দাবি ভিন্ন। মৃতার ছেলে রহমান আনসারি বলেন, ‘‘২০০ বছর ধরে এই জায়গায় কবর দেওয়া হয়। বছর দুয়েক আগেও এই জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছিল। আমার মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর দেহ কবর দিতে গেলে আশ্রম কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানান। এখন হাই কোর্টের নির্দেশে দেহ কবর থেকে তুলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি।’’ পুরুলিয়া মসজিদ কমিটির সম্পাদক ওয়াহিদ আনসারির বক্তব্য, ‘‘ওই জায়গাটি শীলা দীক্ষিত নামে একজন আমাদের দান করেছিলেন। কিন্তু গ্রামের মানুষের শিক্ষার অভাবে জমিটি রেকর্ড করা হয়নি। গত ২০০ বছর ধরে সেই জমিটি মুসলিমরা কবরস্থান হিসাবে ব্যবহার করছেন। এখন আশ্রম কর্তৃপক্ষ হাই কোর্টে জানান, তাঁদের জমিতে দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমরাও আদালতে আবেদন করেছি। এই মামলা আমরাই জিতব।’’ সংশ্লিষ্ট আশ্রমের ম্যনেজার রাজেন্দ্রপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কবর দেওয়ার সময় থেকে আমরা বার বারে পুলিশ এবং প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। তারা তখন পদক্ষেপ করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। হাই কোর্টে যাওয়ারও প্রশ্ন ছিল না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement