‘বাঁচাও...’, চালকের আর্তি থেমে গেল কয়েক মিনিটে

এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ট্যাঙ্কারের চালক, পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের বাসিন্দা জগদীশ রায় (২৫)। জখম হয়েছেন প্রণয় রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কালভার্টে গায়ে গিয়ে পড়ল একটি খালি ট্যাঙ্কার। মুহূর্তে এলাকাবাসী দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন। ট্যাঙ্কারের কেবিনের কাচ ভাঙা। সামান্য দেখা যাচ্ছে দু’জনের মাথা। সঙ্গে চিৎকার, ‘বাঁচাও বাঁচাও...। মরে যাচ্ছি।’ খানিক বাদে এক জনের কণ্ঠস্বর থেমে গেল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এমনই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গলসির পুরসা হাসপাতাল মোড় এলাকায়। রাস্তার নাম, সেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে।

Advertisement

এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ট্যাঙ্কারের চালক, পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের বাসিন্দা জগদীশ রায় (২৫)। জখম হয়েছেন প্রণয় রায়। তাঁর বাড়ি, পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার বেগুনকোদর গ্রামে। তাঁকে প্রথমে পুরসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

নিজেদের প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়ে রবি মণ্ডল, রাজেশ বাগদি, মিলন মল্লিকেরা জানান, ট্যাঙ্কারটি আচমকা রাস্তার বাঁ দিকে চলে আসে। আর তার পরেই নিয়ন্ত্রণ হারায় তা। সজোরে গিয়ে ধাক্কা মারে নয়ানজুলির কালভার্টে। সঙ্গে বিকট শব্দ। রবিবাবুরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শুরু করেন উদ্ধারের চেষ্টা। জড়ো হয়ে যান আরও অনেকেই।

Advertisement

কিন্তু ট্যাঙ্করটি কালভার্টের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা মারায় কেবিনটি চেপ্টে যায়। আটকে পড়েন জগদীশ, প্রণয়ও। কাছেই থাকা একটি মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ট্যাঙ্কারটি সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। মিলনবাবু বলেন, ‘‘দশ-পনেরো মিনিট দু’জনেই চিৎকার করছিলেন। কিন্তু একটু পরেই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদটা এক জন আর করতে পারেননি। ভেবেছিলাম, এক জন হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন।’’

মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে উদ্ধারকাজ না হওয়ায় খানিক বাদে গলসি থানা থেকে তিনটি ক্রেন আনা হয়। সেই ক্রেনগুলি দিয়ে ট্যাঙ্করটিকে পিছন দিক থেকে তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। শেষমেশ, সামনের দিক থেকে দু’টি মাটি কাটার যন্ত্র ঠেলা দিতে শুরু করে। তাতেও লাভ হয়নি। উদ্ধারকাজের তদারকি করেন গলসি থানার অফিসার ইনচার্জ দীপঙ্কর সরকার। গ্যাস কাটার ব্যবহার করেও লাভ হয়নি।

ক্রমাগত চেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টা বাদে উদ্ধারকারী কয়েক জন দেখতে পান, কেবিনের ভিতরে থাকা খালাসির পা আটকে গিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ততক্ষণে পুরসা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এক স্বাস্থ্যকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। কেবিনের মধ্যেই প্রণয়কে অক্সিজেন দেওয়া হয়।

শেষমেশ শাবল দিয়ে কেবিনের মাঝে, যেখানে প্রণয়ের বাঁ পা আটকে গিয়েছিল, সেখানে চাড় দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় প্রণয়কে। উদ্ধার করা হয় জগদীশের দেহও। পুরসা হাসপাতালে প্রণয় বলেন, ‘‘বাঁ পা আটকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল মারাই যাব।’’

কিন্তু জগদীশকে না বাঁচাতে পারার আক্ষেপ যাচ্ছে না মিলনদের। তাঁর আর্তনাদ অনেকের মনেই উস্কে দিচ্ছে, এই রাস্তাতেই দু’বছর আগের একটি দুর্ঘটনার কথা। রথতলায় দ্রুতগতিতে পাশ কাটাতে যাওয়া প্রাইভেট কারের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে পড়েছিল গরম পিচের ট্যাঙ্কার। মৃত্যু হয়, তিন মহিলা, দুই শিশু-সহ সাত জনের। সেখানে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছিলেন, ‘‘আচমকা, শিশুর গলায় ‘আঙ্কল বাঁচাও, আঙ্কল বাঁচাও’ চিৎকার শুনতে পাই। কিন্তু ওকে বাঁচাতে পারিনি।’’

তবে গলসি থানা সূত্রে জানা যায়, ট্যাঙ্কারের মতো ভারী গাড়িকে তোলার মতো ক্রেন গলসিতে নেই। তাই চেষ্টা করেও দ্রুত উদ্ধার করা যায়নি দু’জনকে।

এ ভাবেই আটকে পড়ে ট্যাঙ্কারটি। চলছে উদ্ধারকাজ। নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement