(বাঁ দিকে) উদ্ধার হওয়া কালীর গয়না। (ডান দিকে) ধৃত অতিথি। —নিজস্ব চিত্র।
‘হমারে জেল মে সুড়ঙ্গ!’ না কি ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’? কালীপুজোর রাতে মূর্তির গা থেকে ১০ লক্ষ টাকার গয়না চুরির ঘটনায় এমনই প্রশ্ন জাগছে বর্ধমানের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের মনে। কারণ, চুরির অভিযোগে পুলিশ যাঁকে ধরেছে, তিনি বাড়ির ‘বিশেষ অতিথি।’
পূর্ব বর্ধমানের রসুলপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কালীপুজো প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। পুজোর রাতে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হয়। নিমন্ত্রিত থাকেন অনেকে। সোমবার কালীপুজোর রাত ছিল জমজমাট। সকলেই হাসিখুশি। হঠাৎ মূর্তির দিকে নজর যেতেই কাটল তাল।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা।
সবে পুজো সমাপ্ত হয়েছে। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য তখন অতিথি আপ্যায়নে
ব্যস্ত। ঠিক তখনই শুরু হয় শোরগোল। পরিবারের এক সদস্যা দেবযানী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,
‘‘হঠাৎ করেই আমাদের বাড়ির এক জন খেয়াল করেন, দেবীর বেশ কিছু গয়না তাঁর দেহে নেই। পরিমাণ
ধরলে প্রায় দশ ভরি সোনা। দাম ১০ লক্ষ টাকার বেশি। আর আবেগের মূল্য? অমূল্য! সবার অলক্ষ্যে সেটাই কিনা
হাতসাফাই হয়ে গেল!’’
পুজোর ব্যস্ততার মধ্যেও মেমারি থানায় বিষয়টি জানিয়েছিল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। দায়ের হয় লিখিত অভিযোগও। তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ হয় দেবজ্যোতি চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এক মহিলা সদস্যের বিশেষ বন্ধু। অদূর ভবিষ্যতে পরিবারের জামাই হওয়ার কথা তাঁর। এ নিয়ে দ্বিতীয় বার জেলার বিখ্যাত পুজোয় নিমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। তবে চুরির তদন্তে পুলিশ ‘ব্যানার্জিবাড়ি’তে যেতেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন ওই যুবক। খোঁজ শুরু হয় তাঁর।
‘চোর-পুলিশ খেলা’র পর দেবজ্যোতিকে ধরতেই ভেঙে পড়েন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের খানিক ক্ষণ পর দেবীর চুরি যাওয়া গয়না এক এক করে বার করে দেন। মেমারির ডিএসপি মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তিনি ভেঙে পড়েন। চুরি যাওয়া সমস্ত গয়না উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে বর্ধমান আদালতে হাজির করানো হয়।’’
জানা গিয়েছে, ধৃতের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই। বান্ধবীর আমন্ত্রণে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার তাঁর বাড়ির পুজোয় উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। ও দিকে, চোর ধরা পড়লেও মনখারাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের। অতিথির এমন কাণ্ডে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের এক নবীন সদস্যা।