বাধা পেয়ে পাল্টা মার কালনায় 

এ দিন সকালে ওই দুই ব্লকে বেশ কিছু আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

মনোনয়ন নিয়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলছে সেই সোমবার থেকেই। মারধর, হুমকি ও গালিগালাজের জেরে মঙ্গলবারও নানা এলাকায় মনোনয়নপত্র তোলা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তবে, এই দু’দিন গোলমাল কোথাও খুব বেশি হয়নি। বুধবার অবশ্য অশান্তি বেশ বড় আকারই নিল পূর্বস্থলী ১ এবং কালনা ১ ব্লকে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে শাসকদলের কাছে মার খেলেও কালনায় পাল্টা মারের রাস্তায় হাঁটল বিজেপি। দুই ঘটনা মিলিয়ে মোট ১৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

এ দিন সকালে ওই দুই ব্লকে বেশ কিছু আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে বিজেপি। পূর্বস্থলী ১ ব্লক অফিস থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে তাদের পার্টি অফিসে বগপুর, জাহান্নগর, সমুদ্রগড় ও দোগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন সংক্রান্ত নথিপত্র ঠিক করার কাজ করছিলেন কর্মীরা। বিজেপি-র অন্যতম রাজ্য সম্পাদক, পূর্বস্থলীর বাসিন্দা রাজীব ভৌমিকের অভিযোগ, বেলা ১২টা নাগাদ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মল্লিকের নেতৃত্বে শাসক দলের লোকজনেরা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালায়। হামলায় পাঁচ জন কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন বলেও রাজীববাবুর দাবি। ওই ঘটনার পরে এ দিন আর বিজেপি মনোনয়ন জমা দেয়নি। যদিও বিজেপির অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। দিলীপবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি-ই এ দিন বহিরাগত লোকজন এনে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা ইট মেরে সরকারি অফিসের কাচের জানলা ভাঙা-সহ বেশ সম্পত্তি নষ্ট করেছে। ওদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতেও কোনও বাধা দেওয়া হয়নি।’’ দিলীপবাবু এ কথা বললেও পুলিশ ওই ঘটনায় যে সাত জনকে ধরেছে, তাঁরা সকলেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত।

কালনা ১ ব্লকে মনোনয়ন পর্ব সকাল থেকে ঠিকঠাকই চলছিল। দুপুর দেড়টা নাগাদ বিজেপি-র জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় মণ্ডল বেশ কয়েক জন দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেই বদলে যায় ছবিটা। বিজেপির অভিযোগ, ব্লক অফিসের ভিতরে তৃণমূল তাদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়। তার পরেও প্রার্থীরা এগোতে চাইলে এক বিজেপি নেতাকে মারধর করা হয়। এর পরেই প্রত্যাঘাতের রাস্তায় হাঁটে বিজেপি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতা রাজকুমার পাণ্ডেকে ধাক্কা দেওয়া হয়। মারধরের চেষ্টা করতেই পুলিশ ওই নেতাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যায় ব্লক অফিসের ভিতরে। এ বার লাঠি, বাঁশ, চ্যালা কাঠ নিয়ে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকরা তাণ্ডব শুরু করেন। লাঠির আঘাতে ভেঙে ফেলা হয় বাঁশের ব্যারিকেড। পরে ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে এসটিকেকে রোডে বিজেপি-র লোকজন একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে তাড়া করে মারধর করেন। এক জনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে পেটানো হয়।

Advertisement

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে অল্প সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন। ঘটনার সময় কার্যত অসহায় অভস্থায় দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। পরে কালনা থানার ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় বড় পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার সময় মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য ধাত্রীগ্রাম, কৃষ্ণদেবপুর, সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক স্থানীয় কিসান মান্ডি-সহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। পুলিশের সঙ্গেই দ্রুত তাঁরা চলে আসেন ব্লক অফিস চত্বরে। কিন্তু, ততক্ষণে বিজেপি-র লোকজন তাণ্ডব চালিয়ে চলে গিয়েছে।

উত্তেজিত তৃনমূল কর্মীরা এ বার পাল্টা হামলার চেষ্টা চালালেও পুলিশ ও দলীয় নেতারা তাঁদের শান্ত করেন। তবে ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে বিজেপি নেতা ধনঞ্জয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘রাজকুমার পাণ্ডে নামে তৃণমূল নেতা আমাদের বলে দেন, এখানে বিজেপি মনোনয়ন জমা দেবে না। এর পরেই উত্তেজনা ছড়ায়।’’ যদিও রাজকুমারবাবুর বক্তব্য, ‘‘এ দিন ব্লক অফিসে অন্য কাজে এসেছিলাম। বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা দলনেত্রীর নামে গালিগালাজ করছিল। প্রতিবাদ করলেই ওরা মারধর শুরু করে। আমাদের তিন কর্মীকে পেটায়।’’

পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ৮ জন বিজেপি-র। বাকিরা তৃণমূলের বলে সূত্রের খবর। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘এত মানুষ কী করে ব্লক অফিস ঢুকলেন, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন